শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমস্যার পাহাড় বিবির বাজার স্থলবন্দরে

আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় কমেছে যাত্রী আসা-যাওয়া

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

সমস্যার পাহাড় বিবির বাজার স্থলবন্দরে

বিবির বাজার স্থলবন্দর —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লার বিবির বাজার দেশের ১৩তম স্থলবন্দর। রাজধানী থেকে সবচেয়ে কাছের স্থলবন্দরও এটি। প্রতিষ্ঠার এক দশকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বিবির বাজার বন্দর। এখানে কিছু সিমেন্ট ও পাথর রফতানি হলেও আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায়। গত ১০ মাসে এ বন্দর দিয়ে রফতানি হয়েছে সাড়ে ৬৩ কোটি টাকার পণ্য। আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৩ লাখ টাকার। যাত্রী সুবিধা কম থাকায় দিনে ২০-৩০ জনের বেশি লোক যাতায়াত করেন না।

সিএন্ডএফ এজেন্ট, আমদানি-রফতানিকারক ও কাস্টমস অফিস সূত্রমতে, বিবির বাজার বন্দরে ৪৫টি সিএন্ডএফ এজেন্ট থাকলেও কাজ না থাকায় সক্রিয় আছে মাত্র চারটি। এ বন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা যায় পাথর ও সিমেন্ট। তবে ত্রিপুরার উদয়পুর পর্যন্ত রেললাইন হওয়ায় পাথরের চাহিদা কমেছে। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে পাথর এনে সিলেটে ভেঙে তা কুমিল্লা হয়ে ত্রিপুরা পাঠানো হতো। এখন রেললাইন হওয়ায় তারা সরাসরি ত্রিপুরা পাথর পাঠাচ্ছেন।

বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সর্বত্রই সমস্যা। সিএন্ডএফের একটি মাত্র অফিস চালু আছে। কাজ না থাকায় তারা বসে আছেন। বন্দরে নেই কোনো শোরগোল। টিনের চালার কাস্টম অফিসে পানি পড়ে মেঝেতে গর্ত হয়ে গেছে। অফিসের একমাত্র শৌচাগারটিতে নেই পানির ব্যবস্থা। আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আছেন চারজন। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আট কিলোমিটার দূরে শহর থেকে খাবার নিতে হয়। একই অবস্থা ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের। সেখানে নেই নিরাপত্তাবেষ্টনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বন্দরের ওয়ে ব্রিজ মেশিন, ওয়েট ব্রিজ ও স্ক্যানিং মেশিন নেই। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাজ করতে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। আবাসিক ও খাবার ব্যবস্থা না থাকায় কোনো কর্মকর্তা এখানে আসতে চান না। আগরতলা ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরা বিলকিস ও আফসানা জানান, এ বন্দরে যাত্রীর জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই যাত্রী বিশ্রামাগার, টয়লেট, ক্যান্টিন। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো নয়। কুমিল্লা-আগরতলা সরাসরি বাস চালু হলে যাত্রীদের সুবিধা হতো। ব্যবসায়ী জাফর ইকবাল ও জাকির হোসেন জানান, মহাসড়ক এবং রাজধানীর কাছে হওয়ায় এটি হতে পারতো দেশসেরা স্থলবন্দর। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পিছিয়ে পড়েছে। এখানে কাস্টমসে জনবল কম। ট্রাক এলে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয়। এতে ভাড়া বেড়ে যায়। পরিবহন শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমদানি উন্মুক্ত এবং ট্যাক্স কম হলে ব্যবসা আরো সম্প্রসারিত হবে। সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল বলেন, ‘আগে পাথর রফতানি হলেও এখন তা বন্ধের পথে। শুধু সিমেন্ট যাচ্ছে। আমদানি হয় না বললেই চলে। আমদানি ছাড়া বন্দর কখনও দাঁড়াতে পারে না।’ বিবির বাজার বন্দর পুলিশ চেকপোস্টের ইনচার্জ এসআই আবদুল হাই বলেন, ‘এখানে বাসস্থান, খাবার ও পানির সমস্যা রয়েছে। যাত্রীদের বিশ্রামাগার ও শৌচাগার নেই। অফিসের নেই কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনি।’ বন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাধন জিৎ জানান, আমদানি পণ্য উন্মুক্ত করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর