শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নওগাঁর ১১ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৯ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২৭৫টি পদের ১৯০টিই শূন্য। এ কারণে জেলায় চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২৭৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮৫ জন। এ হিসাবে ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ পদ শূন্য। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অনুমোদিত তিনিটি পদে সবাই কর্মরত আছেন। তবে মান্দায় ২১ পদের মধ্যে পাঁচজন, মহাদেবপুরে ২১ জনের জায়গায় নয়জন, আত্রাইয়ে ১০ জনের স্থলে আটজন, রানীনগরে ১০ জনের বিপরীতে আটজন, বদলগাছিতে ২১ পদের মধ্যে ১১ জন, পত্নীতলায় ২১ জনের মধ্যে নয়জন, সাপাহারে ২১ জনের স্থলে সাতজন, নিয়ামতপুরে ১৩ জনের জায়গায় আটজন, পোরশায় ১০ জনের মধ্যে ছয়জন ও ধামইরহাটে ২১ পদের বিপরীতে সাতজন চিকিৎসক আছেন। আর ৯৯টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনোটিতেই বর্তমানে চিকিৎসক নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর কোনোটিতে অবেদনবিদ, আবার কোনোটিতে শল্যচিকিৎসকের অভাবে বড় অস্ত্রোপচার হয় না। সম্প্রতি মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের দীর্ঘ সারি। কথা হয় উপজেলার ছোট বেলালদহ গ্রামের সানোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে হাসপাতালে অ্যাসে চিকিৎসা না পাইয়ে ঘুরে গেছি। তাই অ্যাজকা আবার আইছি। সকাল সাড়ে ১০টায় টিকিট ক্যাইটা লাইনে দাঁড়ায়া আছি। ডাক্তার নাই। অ্যাজকা চিকিৎসা না পাইলে চিন্তা করছি আর এখানে আসমু না।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনোরঞ্জন মণ্ডল বলেন, প্রতিদিন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫০-৩০০ রোগী আসেন। অথচ ৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক মাত্র পাঁচজন। মান্দার মতো চিকিৎসক-সংকট অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। পত্নীতলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার বলেন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক না থাকায় রোগীর চাপ পড়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মাত্র আটজন চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন ২০০-২৫০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধু উপজেলায় নয়, চিকিৎসক-সংকট আছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালেও।

এ হাসপাতালে ৪২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩২ জন চিকিৎসক। সদর হাসপাতালের আরএমও মুনীর আলী আকন্দ বলেন, বহির্বিভাগে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আটজন চিকিৎসক প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২০০ রোগী দেখেন। ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমদাদুল হক বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় পুরো জেলার রোগী এখানে আসে। ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। অনেক রোগীকে থাকতে হয় মেঝেতে।  নওগাঁর সিভিল সার্জন রওশন আরা খানম বলেন, ‘২০১৪ সালে ৫০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর নওগাঁয় আর কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই আগের অনেকে উচ্চতর কোর্স করতে বিদেশে বা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে একাধিকবার আবেদন করেও ফল পাচ্ছি না।’

সর্বশেষ খবর