শিরোনাম
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবার মুখে ‘সিজারকে না নরমাল ডেলিভারিকে হ্যাঁ’

পাল্টে গেছে বীরগঞ্জ হাসপাতালের চিত্র

দিনাজপুর প্রতিনিধি

‘সিজারকে না, নরমাল ডেলিভারিকে হ্যাঁ বলুন’ স্লোগান নিয়ে বীরগঞ্জ হাসপাতালের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক। এখন উপজেলার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এই শ্লোগান।

বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের ভিড়ে প্রসূতিদের নরমাল ডেলিভারি বন্ধের উপক্রম। ব্যবসায়িক কারণে এ সব ক্লিনিক-হাসপাতালে সিজার করানোর জন্য আছে দালাল চক্র। আবার গ্রামাঞ্চলে অদক্ষ, প্রশিক্ষণবিহীন দাইয়ের হাতে প্রসবের কারণে মায়েদের মৃত্যুঝুঁকি থাকে। তাই দালাল ও অদক্ষ দাইয়ের হাত থেকে প্রসূতিদের রক্ষায় এবং নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতে বীরগঞ্জ হাসপাতালের কয়েক চিকিৎসক গত জানুয়ারি থেকে টিমওয়ার্ক শুরু করেন। তারা প্রচারণায় কাজে লাগিয়েছেন বিভিন্ন কৌশল। এজন্য প্রসূতিদের দেখে বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেওয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সিলিং আর চেক আপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠপর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সরকারি ও বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয়। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সিলিং করেন চিকিৎসকরাও। এ টিমে রয়েছেন বীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. জাহাঙ্গীর কবীর, মাহমুদুল হাসান পলাশ, আফরোজ সুলতানা, তাহমিনা ফেরদৌস, মাধবী দাস। বীরগঞ্জের দামাইক্ষেত্র গ্রামের আজিজার রহমানের স্ত্রী জেসমিন (৩৩) শুক্রবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিকভাবে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। এ অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে জেসমিন বলেন, ‘দেরি করে সন্তান নেওয়ার কারণে কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের মাঠকর্মী ও চিকিৎসকরা দায়িত্ব নেওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম দিয়েছি। মা-ছেলে সুস্থ আছি।’ একই অনুভূতির কথা জানান, চাকাই গ্রামের এরশাদুলের স্ত্রী আনজু আরা, শীতলাই গ্রামের সুমন ইসলামের স্ত্রী রোকসানা। শুক্রবার তাদেরও নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। বীরগঞ্জ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাহমুদুল হাসান পলাশ বলেন, ‘এ হাসপাতালে এসে প্রসূতিদের নরমাল ডেলিভারি করা প্রায়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমরা টিমওয়ার্ক শুরু করি। দালাল চক্রের কিংবা দাই মাদের বাধা উপেক্ষা করে এর সফলতা পেয়েছি। হাসপাতালে দিনে দিনে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে না।’ তিনি জানান, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর উপজেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় নবজাতকের জন্য জামা-কাপড়, মশারি ও শিশুর মাকে উপহার দেওয়া হয়। এভাবে নরমাল ডেলিভারি হলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও নিরাপদ হবে।

সর্বশেষ খবর