মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই পরিবার তিন মাস ধরে ‘একঘরে’

দেলদুয়ার

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের ডুবাইল গ্রামে হত্যা মামলা প্রত্যাহার না করায় দুটি পরিবারকে তিন মাস ধরে ‘একঘরে’ করে রেখেছেন মাতবররা। পরিবার দুটির সঙ্গে গ্রামের কারও সম্পর্ক তো দূরের কথা আত্মীয়-স্বজনরাও যোগাযোগও করতে পারছেন না। মাতবরদের চাপে স্থানীয় দোকানদার তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করেছেন না। জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডুবাইল গ্রামের ইয়াসিন মিয়া (৫৩) খুন হন। ঘটনার পর তার ছেলে শহিদুল গ্রামের ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। এর কিছুদিন পর থেকেই আসামিদের পরিবারের লোকেরা মাতবরদের দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নিহত ইয়াসিন ও তার ভাই মোকসেদের পরিবারদের হুমকি ধামকি করে আসছিল। কোনোভাবেই মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ইয়াসিনের ছেলে শহিদুল, ভাতিজা আসাদুলকে হত্যার হুমকি দেয়। তারা আসাদুলদের একটি ঘরে আগুন দেয় এবং পুকুরের মাছও মেরে ফেলে। এ অবস্থায় আসাদুল ৬ জুন নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে মামলা করেন। আদালতের সমন হাতে পেয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে হত্যা মামলার আসামি ও তাদের স্বজনরা। তারা একত্রিত হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মাতবরদের নিয়ে ২৮ জুলাই সভা করে। এতে সিদ্ধান্ত হয় নিহত ইয়াসিন মিয়া ও তার ভাই মৃত মোকছেদ আলীর পরিবারকে ‘একঘরে’ করার। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় এই দুই পরিবারের সঙ্গে কেউ যেন সম্পর্ক না রাখে। গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়াও নিষেধ করা হয়। গতকাল কথা হয় ‘একঘরে’ রাখা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। নিহত ইয়াসিনের ছেলে শহিদুল বলেন, ‘পিতা হত্যার বিচার চেয়ে আজ আমরা নির্যাতিত। আসামিরা আমাদের একঘরে করেছে।’ শহিদুলের মা আসমা জানান, হত্যাকারীরা প্রভাবশালী। তাই তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য একঘরে করে চাপ সৃষ্টি করছে। গ্রামের কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। ইয়াসিনের ভাতিজা আসাদুল জানান, গত কোরবানির ঈদে তাদের গ্রামের ঈদগাঁয় নামাজ পড়তে দেওয়া হয়নি। দোকানপাটে কিছু কিনতে গেলে দোকানিরা মাতবরদের ভয়ে কিছু বিক্রি করে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল মিয়া বলেন, ‘নিহত ইয়াসিন মিয়ার ভাতিজা আসাদুল তাদের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে যে মামলা করেছে তাতে গ্রামের মানুষদের হয়রানি করা হয়েছে। তাই সমাজের সবাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’। মাতবর জালাল ভূইয়া বলেন, ‘ওই দুই পরিবার তাদের মতো থাকবে, আমরা আমাদের মতো থাকব। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। এটাই সমাজের সিদ্ধান্ত।’ ডুবাইল ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস মিয়া জানান, তিনি একঘরে করার ঘটনাটি শুনেছেন।

 

সর্বশেষ খবর