শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

যেনতেন রোগীকে স্টেরয়েট দিচ্ছেন হাতুড়ে চিকিৎসক

বাড়ছে নানা জটিলতা

শেরপুর প্রতিনিধি

স্টেরয়েট একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। সংকটাপন্ন রোগীকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাধারণত স্টেরয়েট দিয়ে জীবন বাঁচানোর শেষচেষ্টা করেন। স্টেরয়েড ব্যবহারের সময়-মাত্রা ও ব্যহারের সুবিধার হার নির্ণয়ে ডাক্তারদের খুব যত্নবান হতে হয়। একটু এদিক-সেদিক হলে রোগী মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। স্পর্শকাতর এই ওষুধটি এখন যত্রতত্র অকারণে ব্যবহার করেছেন শেরপুরের বিভিন্ন কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসকরা—এমন অভিযোগ জেলার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের। সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অসংখ্য আয়ুর্বেদিক কোম্পানি এই ওষুধ বাজারে সরবারহ করছে বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সূত্রে জানা যায়, যাদের ওষুধে আর কাজ করে না, রোগ ক্রনিক হয়ে গেছে, শ্বাসকষ্ট ও বাত ব্যথাসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের যুক্তিসংগত কারণে সাধারণত ডাক্তাররা স্টেরয়েট দেন। এ ক্ষেত্রেও অতি সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু কবিরাজ ও গ্রাম্য ডাক্তাররা দেদারছে রোগীদের স্টেরয়েট দিচ্ছে। ওরা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথাও জানে না। রোগীরা অজান্তেই স্টেরয়েট ব্যহারের ফলে মাংসপেশি দুর্বল, হাড়ের নানা সমস্যা, চামড়ার নিচে জখম, উচ্চ রক্তচাপ, কার্যক্ষমতা হ্রাস, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যুবক-যুবতীরা একটি নির্দিষ্ট বয়সে স্বাস্থ্য বাড়াতে বা মোটা হতে কবিরাজের কাছে এলে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্টেরয়েট বড়ি। এটাকে গ্রামের যুবকরা ‘মোটাতাজাকরণ’ বড়ি হিসেবেই চিনে। শেরপুর সদর হাসপাতালের ডা. হাসিনাতুল জান্নাত হ্যাপি বলেন, ‘কবিরাজি চিকিৎসা নেওয়া স্টেরয়েট আসক্ত রোগী প্রতিদিনই পাচ্ছি’। জেলায় চিকিৎসারত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শহিদুল ইসলাম, আলমগীর মোস্তাক আহাম্মেদ, ইন্দ্রজিত প্রসাদসহ অনেকের অভিযোগ, এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন স্টেরয়েট ব্যবহার চলতে থাকলে অসংখ্য মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। শেরপুরে যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে না বুঝেই এ ওষুধটি দেওয়া হচ্ছে। জেলা ড্রাগ সুপার তাহমিদ জামিল বলেন, চিকিৎসার নামে ইচ্ছামতো স্টেরয়েট ব্যবহার চলছে এমন খবর শুনেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শেরপুর বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. নাদিম হাসান জানান, এই ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার চলছে। বিষয়টির প্রমাণ রোগীদের কাছে পাওয়া গেছে। এর নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। সিভিল সার্জন ডা. রেজাউল করিম জানান, অভিযুক্তরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে স্টেরয়েট দিচ্ছে না। মুখে বলে দিচ্ছে ফলে ধরা যাচ্ছে না। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর