রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে চোরাচালানের অর্থ পরিশোধ হচ্ছে সোনার বার দিয়ে। আগে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা গেলেও এখন টাকা যাচ্ছে কম। ভারত থেকে আসা গরু, মাদক ও অস্ত্রের চোরাচালানের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে সোনার বার দিয়ে। পরিবহনে সুবিধা হওয়ায় এই নতুন কৌশল নিয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কয়েকজন সোনাসহ গ্রেফতার হওয়ার পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকজন চোরাকারবারি গড়েছেন এই সিন্ডিকেট। ভারতের অংশে নেতৃত্বে থাকা এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা এনামুল হক খুদু ও তার ভাগ্নে পিন্টু সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়েছে। তবে আড়ালে থেকে এখনো সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন তার অন্য ভাগ্নেরা। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি থেকে ১৫টি সোনার বারসহ এক চোরাকারবারিকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। যার ওজন প্রায় দেড় কেজি। গ্রেফতার হওয়া লিটন আলী শেখ (৩০) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার জানপুর গ্রামের বাসিন্দা। সোনার বারগুলো ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার সময় গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জে বাস তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয়। এ বছরের ২১ মার্চ রাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যরা (বিজিবি) চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের এক নম্বর গেইট এলাকা থেকে ১০টি সোনার বার উদ্ধার করে। যার ওজন প্রায় এক কেজি। এসব সোনার বারগুলো উদ্ধারের পরই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিশ্চিত হন, চোরাচালানের অর্থ পরিশোধের জন্য এখন স্বর্ণের বার ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের উপ-পরিচালক লুত্ফর রহমান জানান, মাদকের টাকা পরিশোধের জন্যেও ভারতে স্বর্ণের বার পাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়িতে সোনার বারসহ লিটন আলী শেখ নামের যাকে ধরা হয়, সেও মাদকের টাকা পরিশোধ করতে স্বর্ণের বারগুলো নিয়ে যাচ্ছিল।
গোয়েন্দা সূত্র, ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে জানান, প্রতিদিন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক, অস্ত্র এবং গরু পাচার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। এসব অবৈধ ব্যবসার দেনা শোধ করতে ভারতের পাচারকারীদের হাতে এদেশের পাচারকারীরা প্রায় অর্ধেক টাকা পরিশোধ করছে হুন্ডির মাধ্যমে আর অর্ধেক টাকা পরিশোধ করছে সোনার বারের মাধ্যমে। যার কারণেই রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার স্বর্ণের বার পাচার হচ্ছে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে।
রাজশাহীর একজন ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, শুধু রাজশাহী থেকে সপ্তাহে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে। এর চেয়েও বেশি পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। দুই জেলার সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণের বারও পাচার হচ্ছে একই হারে। ভারত থেকে যেসব গরু, মাদক এবং অস্ত্রের চালান বাংলাদেশে ঢুকছে তার অন্তত অর্ধেক টাকাই পরিশোধ করতে হচ্ছে স্বর্ণের বারের মাধ্যমে। ফলে এ অঞ্চল দিয়ে স্বর্ণের বার চোরাচালান বেড়েছে। রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, চোরাকারবারিরা তাদের অর্থের লেনদেন করে গোপন মাধ্যমে। স্বর্ণের বার এবং হুন্ডির মাধ্যমেই তারা অর্থ পাচার করে। এদের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করছে।