দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসার জায়গা কমিউনিটি ক্লিনিক। কভিড-১৯ এ ওইসব ক্লিনিকের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। ক্লিনিকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরামর্শসহ প্রাথমিক সেবা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে মৌলভীবাজারের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মীদের অবহেলায় পুরো জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়েছে। ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ আছে সিএইচসিপি কর্মীরা সপ্তাহে এক দিন কিংবা দুই দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন। আবার কোনো কোনো ক্লিনিক মাসে ৮/১০ দিন খোলা হয়। স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা কেউ কেউ মাসেও এক দিন ক্লিনিকে আসেন না। সূত্র বলছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতায় এমনটি হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ কেউই সঠিকভাবে তদারকি করছেন না। এদিকে কোনো উপায় না পেয়ে জেলার সাধারণ মানুষ প্রাইভেট হাসপাতাল ও চেম্বারে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। এতে খরচ হয় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ টাকা। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারে ১৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। প্রস্তাবিত আছে আরও ২৫টি। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি, একজন পরিবার পরিকল্পনা কর্মী ও একজন স্বাস্থ্য সহকারী রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সিএইচসিপি কর্মীরা সরকারি বন্ধের দিন পরে বাকি দিনে দায়িত্ব পালন করার কথা। পরিবার পরিকল্পনা কর্মী ও স্বাস্থ্য সহকারীরা সপ্তাহে দুই দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে এবং অবশিষ্ট দিনে মাঠে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা মাসের প্রথম অথবা শেষে এক দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে হাজিরা খাতায় পুর মাসের স্বাক্ষর দিয়ে আসেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, আঞ্চলিক সড়ক, উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী ও বাজারের পাশে অবস্থিত ক্লিনিকগুলোতে কিছুটা সরকারি নিয়মনীতি মেনে সেবা কার্যক্রম চললেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্লিনিক সপ্তাহে ১/২ দিন খোলা হয়। মাঝে মধ্যে ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি কর্মীরা যান এবং স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা টানা কয়েক দিন অনুপস্থিত থাকেন। সকালে অফিস খোলার জন্য কম টাকা বেতনে গ্রামের একটি মেয়ে রাখেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ওই মেয়ে সকাল ১০টায় এসে ক্লিনিক খোলে বসে। সরেজমিন রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে গতকাল সকাল ১১টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। এ সময় আশপাশের লোকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান ক্লিনিকে সেবা পাওয়া আমাদের এলাকাবাসীর ভাগ্যের ব্যাপার। দিনের পর দিন ক্লিনিক বন্ধ থাকে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায় এমন চিত্র শুধু হাজিগঞ্জ ক্লিনিকে নয় জেলার সিংহভাগ ক্লিনিকের একই চিত্র। হাজিগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমভাগ গ্রামের লিটন মিয়া, পিপলু আহমদ, এনামুল, আকলিচসহ একাধিকজন বলেন, একজন এসে মাসে ১/২ দিন খোলেন। আর কোনো কর্মীকে কখনো দেখিনি। কমলগঞ্জ উপজেলার খামদপুর, রানী বাজার, বনগাঁও, পাত্রখলা, ছয়কুট ও চৈত্রঘাট কমিউনিটি ক্লিনিকে একই অবস্থা। মৌলভীবাজার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, অনেক সময় প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং থাকায় আমার কর্মীরা উপস্থিত হতে পারে না। তবে কোনো ভাবে দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে মূল দায়িত্ব পালন করার কথা সিএইচসিপি কর্মীদের। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, করোনা থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভিজিট করতে পারছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভিজিট করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।