করোনাসহ বিভিন্ন কারণে উত্তোলন বন্ধ থাকার পরও দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনিতে গত সাত বছরে প্রায় সাড়ে ৪৮ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়েছে। প্রতিদিন বিক্রির পর বর্তমানে মজুদ রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। শুরুর দিকে লোকসানে থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে তিন শিফটে খনি থেকে রেকর্ড পরিমাণ উত্তোলন এবং বিক্রির ফলে খনিটি পর পর তৃতীয়বারের মতো লাভের মুখ দেখেছে। গত ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে খনিটি মুনাফা করেছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও খনিটি লাভজনক হবে বলে খনি কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। এ ছাড়া পাথর বিক্রির ওপর সরকারে ট্যাক্স ভ্যাট থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। খনি সূত্র জানায়, গত ২০০৭ সালের ২৫ মে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলন শুরু করে মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক অসন্তোষ, ধর্মঘটসহ বিভিন্ন সমস্যায় ৩১০ জন দেশীয় খনি শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন এক শিফটে পাথর উত্তোলন করে দীর্ঘ সাত বছরে মাত্র ২০ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে খনি কর্তৃপক্ষ। মাইন পরিচালনা ব্যয় এবং বিক্রির চাহিদা অনুযায়ী পাথর উত্তোলন না হওয়ায় ওই সময় কয়েক শ কোটি টাকা লোকসানে পাথর খনিটি বন্ধের উপক্রম হয়। খনিটিকে সচল রাখতে বর্তমান সরকার ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৪০০ কোটির টাকা ব্যয়ে খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এবং পরিসেবার একটি আন্তর্জাতিক ছয় বছর মেয়াদের চুক্তি করে বেলারুশভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে। চুক্তির মেয়াদকালে খনির কাজে অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সময়মতো আমদানি করার অনুমোদন না দেওয়া অর্থাৎ দুই বছর বিলম্ব হয়। এরপর বাকি তিন বছরে জিটিসি কর্তৃক পাথর উত্তোলন করে সাড়ে ৩৭ লাখ মেট্রিক টন। জিটিসির সঙ্গে ছয় বছরের চুক্তির মেয়াদ গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলেও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে কয়েক দফা দরপত্রের তারিখ পেছানো হয়। বর্তমানে বর্ধিত সময়ে আগামী ১৭ জুন দরপত্র কেনার শেষ দিন এবং ২০ জুন দরপত্র খোলার শেষ দিন নির্ধারিত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখার স্বার্থে জিটিসির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ১ বছর বাড়ানো হয়। যার মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর। বর্ধিত চুক্তির সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ১১ লাখ পাথর উত্তোলন করেও আর ২০ শতাংশ পাথর উত্তোলন করতে পারবে এমনটাই বলছেন জিটিসির একটি সূত্র। জিটিসি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এক দিনে তিন শিফটে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করে। জিটিসি করোনার এ মহামারীতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে মধ্যপাড়া পাথর খনির অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। পাথর উত্তোলনের পাশাপাশি পাথর খনি সংলগ্ন গ্রামবাসীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা চালিয়ে যাচ্ছে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কো. লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব ফরাজী বলেন, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানায় করোনায় কোনো সমস্যা হয়নি এখানে। খনি থেকে গড়ে প্রতিদিন পাথর উত্তোলন হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টন এবং বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার টন। এ পর্যন্ত খনির বিভিন্ন ইয়ার্ডে মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর। গত দুই বছর থেকে খনিটি লাভজনক রয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, অনিশ্চিত হয়ে পড়া সম্ভাবনাময় মধ্যপাড়া পাথর খনিটিকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে মধ্যপাড়া পাথর পাথর খনির খনি ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং পরিসেবার জন্য জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম এবং মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডে মধ্যে ২০১৩ সালে ২ সেপ্টম্বের ৬ বছর মেয়াদি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিগত ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুক্তিটি কার্যকর হয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি পাথর উৎপাদন শুরু হয়।