রবিবার, ২৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

টাকা না পাওয়ায় কমছে আখ চাষ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

টাকা না পাওয়ায় কমছে আখ চাষ

এক বছর ধরে আখ পরিচর্যা করে সেই আখ জয়পুরহাট চিনিকলে বিক্রি করে সময় মতো টাকা না পাওয়ায় জয়পুরহাট জেলায় কমছে আখচাষ। এ ছাড়া আখের চেয়ে অন্যান্য ফসল চাষ করে দাম ভালো পাওয়ায় আখচাষিরা আখ চাষ একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন। মাড়াই মৌসুমে আখ সরবরাহ কমে যাওয়ায় চিনিকলের চিনি উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। আখচাষিরা বলছেন, আখ বিক্রি করে দিনের পর দিন চিনিকলে ধরনা দিয়ে পাওনা টাকা পাওয়া যায় না। এ কারণে কৃষক আখের বিকল্প ফসল চাষ করে তা বাজারে বিক্রি করে নগদ টাকা পান।  জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন বাকি থাকায় তারা আর্থিক কষ্টে পড়েছেন। বেতন না পেয়ে ওইসব শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।  জয়পুরহাট চিনিকল সূত্র জানায় ২০২০-২০২১ মাড়াই মৌসুমে জয়পুরহাট চিনিকলের ৩৭ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন, রংপুর চিনিকলের ২৯ হাজার ২৯১ মেট্রিক টন এবং শ্যামপুর চিনিকলের ২৬ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন আখ মাড়ায় করে চিনি উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন। চিনিকলে আখ মাড়াই চলেছে ৮৭ কর্মদিবস। অবিক্রীত চিনি রয়েছে ৩ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন। যার মূল্য ২১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। চিটাগুড় মজুদ রয়েছে ৩ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন। আখচাষিদের অভিযোগ, আখ বিক্রি করে কখনো সময় মতো আখের টাকা পাওয়া যায় না। সারা বছর ধরে আখের পরিচর্চা করে বছর শেষে তা চিনিকলে বিক্রি করে টাকার জন্য দিনের পর দিন ধরনা দিতে হয়। অন্য ফসল চাষ করলে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য তারা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আখচাষিদের আখ বিক্রির পাওনা টাকা সময় মতো দিতে না পারার বিষয়টি দীর্ঘদিনের। এ ক্ষোভ থেকে আখচাষ থেকে বিরত থাকছেন কৃষকরা। ২০১৩-২০১৪ মাড়াই মৌসুমে জয়পুরহাট চিনিকলের ১০টি জোনে আখচাষ হয়েছিল ১১ হাজার ৬০৮ একর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ১৯.৭০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হয়। ২০২০-২০২১ মাড়াই মৌসুমে আখচাষ হয় মাত্র ৩ হাজার ২০ একর জমিতে। আখের আবাদ কমেছে অর্ধেকেরও কম। সদর উপজেলার ভাদসা গ্রামের আখচাষি মাহমুদ হোসেন জানালেন, তিনি এক সময় ছয় একর জমিতে আখচাষ করতেন। এখন এক-দেড় একরের বেশি আখচাষ করেন না। আখের আবাদ কমে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আখ বিক্রি করে সময় মতো  টাকা না পাওয়া, আবার আখের দামও কম। এক কুইন্টাল (১০০ কেজি) আখের দাম মিল গেটে ৩৫০ টাকা।

একই উপজেলার বাগুয়ান গ্রামের আখচাষি লোকমান হোসেন জানালেন, তিনি আখচাষ একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন। আখচাষ মানেই হয়রানি। টাকার জন্য মিলে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হয়। জয়পুরহাট চিনিকলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. তারেক ফরহাদ আখচাষ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আখ বিক্রির টাকা সময় মতো না দিতে পারা এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখের মূল্য বাড়াতে পারলে আখচাষিদের আখ চাষে আগ্রহ বাড়ত। জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আবু বকর বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখচাষিদের আখ চাষে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। এ মৌসুমে ক্রয়কৃত আখের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। চিনি বিক্রি করে শ্রমিকদের বাকি দুই মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর