বগুড়ায় দিনে ও রাতে অনুভূত হচ্ছে প্রচন্ড গরম। তীব্র গরমের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে এখনো ভরসা হাতপাখা। কাহালু উপজেলার কয়েকটি গ্রামে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার হাতপাখা। এ কারণেই এলাকটি পরিচিত হয়ে উঠেছে পাখা গ্রাম হিসেবে। পাখা গ্রামের নারী ও পুরুষদের হাতপাখা তৈরি করেই এখন সংসার চলে। গরম আবহাওয়ার কারণে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাখা কারিগররা।
জানা যায়, জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে হলেও বগুড়ায় বেশ গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে। গরমের কারণে বাজারে চাহিদা থাকায় তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখা এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। কাহালু উপজেলার আড়োলা, যোগীর ভবন, বাগোইল, আখরাইল গ্রামের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ হাতপাখা তৈরির কাজ করছেন। এ কাজে গ্রামের অনেকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। অনেকেই গ্রামগুলোকে পাখার গ্রাম বলে ডাকেন। কাহালুর আড়োলা গ্রামের পাখা তৈরির কারিগররা জানান, ফাল্গুন থেকে শুরু করে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পুরো আট মাস তালপাখা তৈরির কাজ করে থাকেন তারা। বাকি সময়টা কৃষিকাজে ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র এবং পাখা তৈরি মৌসুমের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে তালপাতা সংগ্রহ করে মজুদ রাখেন। এখানে পাঁচ-ছয় প্রকারের পাখা তৈরি হয়। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে হর্তন, ঘুরকি, তেওয়াল ঘুরকি, ডাগুর পাখা, পকেট পাখা ইত্যাদি। শহর অঞ্চলে নকশি করা পাখা বেশি বিক্রি হয়। সাধারণত নকশি করা পাখা অর্ডার নিয়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। পাখা তৈরির কারিগররা বলেন, এক সময় বিখ্যাত আড়িয়াল মেলাকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষ পাখা তৈরির কাজ শেখে। কাহালু উপজেলার আতালপাড়ার পাখা তৈরির নারী শ্রমিকরা জানান, আদিকাল থেকেই আতালপাড়া গ্রামের শতকরা ৮০ ভাগ পরিবারই এ পেশা আঁকড়ে আছে।
এখন গ্রীষ্মকাল হওয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন অর্ডার আসছে। সাধারণ পাখা তৈরি করতে সব মিলিয়ে ১৫-২০ টাকা খরচ হয়। কিছুদিন আগেও খরচ হতো ১২-১৫ টাকা। এখন বাঁশ, তালপাতা, সুতার দাম বৃদ্ধির কারণে খরচও বেড়েছে। নারী শ্রমিকরা জানান, তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলে কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। যখন বেশি অর্ডার পড়ে তখন প্রতিবেশী শ্রমিকদের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিন মুজরিতে কাজে নেওয়া হয়। পাখা ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে পাখাগুলো পাইকারি দরে কিনেন। এই পাখা বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলায় বিক্রি হয়।