বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিন্ডিকেট

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিন্ডিকেট

ভোলার চরফ্যাশনে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিন্ডিকেটে বিপাকে পড়েছে সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। সমিতির বেঁধে দেওয়া সিদ্ধান্তে চরফ্যাশনের ওষুধ ব্যবসায়ীরা এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা) মূল্যে ওষুধ বিক্রি করছেন। এতে নিরুপায় হয়ে এমআরপি মূল্যে ওষুধ কিনছেন ক্রেতারা। এমনকি ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে সামান্য দাম কম রাখলে জরিমানা গুনতে হয় দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়াও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবসায়ীরা জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে দ্বিগুণ টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য করা হয়। এদিকে যেসব ওষুধের দোকান ওই সমিতির সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত নয়, সেসব দোকানিদের কাছে ওষুধ না বিক্রির জন্য অন্য দোকানিদের লিখিতভাবে জানিয়ে দেন সমিতির নেতারা। সমিতিতে ভর্তির রসিদ দেখানো সাপেক্ষে তাদেরকে ওষুধ দেওয়া যাবে বলে এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এমন-ই অভিযোগ করেছেন একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী। তবে, উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়টি নিয়ে চরফ্যাশন কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির নেতাদের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসবে বলে জানিয়েছেন। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির জরিমানা আদায়ের রসিদের সিরিয়াল নম্বর ১ থেকে শুরু হয়েছে। সর্বশেষ জরিমানা আদায়ের রসিদ কাটেন এ বছরের ১০ মে। ওই রসিদের সিরিয়াল নম্বর ১৭৫২। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত পৌর শহরের ছয়টি ওষুধের দোকানকে জরিমানা করেছে সমিতি। চলতি বছরে একাধিক দোকানে জরিমানা করার বিষয়টি গোপন রেখে জরিমানা আদায়ের সুনির্দিষ্ট কারণ এড়িয়ে যান চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এমআরপি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘চরফ্যাশন পৌর শহরে কেনা দামে ওষুধ বিক্রি করায় এক দোকানিকে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০২২ সালের শুরু থেকে একটি দোকানকে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের সংগঠনের রুলের আয়ত্তে আছে এমন নিয়ম অমান্য করা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধ পেলে জরিমানা করা হয়। পৌরসভার মধ্যে ১৫০টি ওষুধের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩২টি দোকান আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া পুরো উপজেলায় ২ হাজারের মতো ওষুধের দোকান আছে। ওগুলো আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত নয়। জরিমানার বিষয়টি ব্যবসায়ীরা না বুঝে অভিযোগ করে। ব্যবসায়ীরা যেন নকল ওষুধ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা নানান কড়াকড়ি করি। কয়েক বছর আগে এক দোকানে নকল ওষুধ চিহ্নিত করে এসিল্যান্ডের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। নকল ওষুধ বিক্রি করার কারণে জরিমানা করা হয়। অতীতে কিছু ব্যবসায়ীদের এমন প্রতারণা লক্ষ্য করেছি। আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবসায়ীদের শাসনের মধ্যেই রাখি। বছরখানেক ধরে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা বহাল আছে।’

 চরফ্যাশন শহরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, ‘একজন ক্রেতা আমার দোকান থেকে ৯০০ টাকার ওষুধ কিনছেন। ওই ক্রেতার কাছ থেকে ২০ টাকা কম রেখেছি। এ অপরাধে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে চরফ্যাশন কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি। সমিতির বেঁধে দেওয়া এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা) মূল্যে ওষুধ বিক্রি করতে হয়। সভাপতি-সম্পাদকসহ কিছু সদস্য মিলে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা) মূল্যে ওষুধ বিক্রি করতে এমন সিন্ডিকেট তৈরি করেছে।’ একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, সমিতির সভাপতি আবু কাওছার বাচ্চু এবং সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ নিজেদের স্বার্থে এমন মনগড়া নিয়ম করেছে। তাদের এই নিময় মানতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের তর্ক-বিতর্ক হয়। যাদের ড্রাগ লাইসেন্স নাই, তাদের টাকার বিনিময়ে ব্যবসা করার সুযোগ দেয় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক। প্রতি সপ্তাহে চরফ্যাশন পৌর শহর থেকে অসুস্থ বাবার জন্য প্রায় ৭০০ টাকার ওষুধ কেনেন মো. শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যত টাকার ওষুধ কেনা হোক না কেন, এমআরপিতে কিনতে হয়। সব ওষুধের দোকানে একই নিয়ম। হাজারে ১০ টাকাও ছাড় দেয় না। এমন নিয়ম দেশের কোথাও নেই। এরা সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করছেন। যেখানে, ড্রাগ সমিতির নেতারা ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। অথচ সেখানে, সিন্ডিকেট তৈরি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।’ ওষুধ ক্রেতা মো. কামরুল শিকদার বলেন, ‘আমার মা ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগে ভুগছে। প্রতি মাসে প্রায় ৪ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। কিছু টাকা ছাড় পেলে সাশ্রয় হতো। কিন্তু এভাবে এমআরপিতে ওষুধ বিক্রি করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।’ চরফ্যাশন কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সভাপতি আবু কাওছার বাচ্চু বলেন, ‘আমি অনেকদিন ড্রাগ সমিতি থেকে দূরে। দূরে বলতে, শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। সমিতির সভাপতি থাকলেও কার্যকরী নাই।’ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বললে তিনি বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের মোবাইল নম্বর আমার কাছে নাই।’ চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, এ বিষয়ে চরফ্যাশন কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির নেতাদের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসব। ভোলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক ইব্রাহিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলায় ফার্মেসির সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। কারণ এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে কোনো সময় গড়ে উঠতে পারে। এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা) মূল্যে ওষুধ বিক্রি করার বিষয়টি কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে, সরকারি নিয়ম হলো এমআরপি মূল্যের বেশি কেউ ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না। এই উপজেলায় ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স আছে ৪০০ প্রতিষ্ঠানের। লাইসেন্সবিহীন মার্ক করা ৭০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের লাইসেন্স নেই, তাদেরকে শোকজ চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনেকেই লাইসেন্স এর জন্য আসতেছে। আবার অনেকেই কাগজপত্র সম্পন্ন করতে পারেনি। প্রতি মাসেই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সর্বশেষ খবর