রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

ব্যানার ফেস্টুনে সয়লাব টাঙ্গাইল শহর

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

ব্যানার ফেস্টুনে সয়লাব টাঙ্গাইল শহর

দীর্ঘ সাত বছর পর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা স্টেডিয়ামে আগামীকাল। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে পদপ্রত্যাশীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সড়ক-মহাসড়ক, শহরের অলি-গলি, গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সম্মেলন স্থানের আশপাশ। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে শোভা পাচ্ছে তোরণ। নেতা-কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় শহরের মুদি দোকান থেকে চা-স্টল পর্যন্ত সর্বত্রই সম্মেলন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। কারা পাচ্ছেন জেলার নতুন নেতৃত্ব- সেই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। কে হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। ইতোমধ্যে সভাপতি পদে তিনজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অনেকেই উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তদবির করছেন।  টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলমগীর খান মেনু ও আতাউর রহমান খান এমপির নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি ও নাহার আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরনের নাম আলোচনা হচ্ছে। তবে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি পদ ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।  সম্মেলনকে ঘিরে জেলায় সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়ক, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও টাঙ্গাইল শহরের সব সড়কে শতাধিক তোরণ তৈরির কাজ চলছে।

 বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানিয়ে তোরণ ও বিলবোর্ড লাগানো হচ্ছে। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের সমর্থনে স্থানীয় নেতাদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সম্মেলনস্থল পর্যন্ত লাগানো হয়েছে। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে সম্মেলনে ১ লাখ লোকের আগমন উপলক্ষে ব্যাপক আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী সম্মেলনের দুই পর্ব সূচারুরূপে সম্পন্ন করতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে মাথাপিছু ২৭০ টাকা হিসেবে ১ লাখ নেতা-কর্মীর খাবার ও ৩ লাখ টাকা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যয় হিসেবে। বাকি টাকা মঞ্চ ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা সময় দিতে না পারায় সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে বিকাল ৩টায় সময় নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তারা মনে করেন, ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলনে সম্মানিত ডেলিগেট ও কাউন্সিলররা একবেলা খাবার পাবেন না- এটা দলের স্থানীয় নেতাদের দেউলিয়াত্বের পরিচায়ক। এদিকে জেলার ১২টি উপজেলা এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সম্মেলন শেষ করা হলেও অধিকাংশ ইউনিটেরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। উপজেলা এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ তিন-চারটি পদের বিপরীতে নেতাদের নাম ঘোষণা দিয়ে সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। এ জন্য দলের জেলা সম্মেলনে কাউন্সিলরদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। অধিকাংশ উপজেলা সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করায় স্থানীয় নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, ডা. দীপু মনি এমপি। প্রধান বক্তা থাকবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। বিশেষ বক্তা থাকবেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডক্টর আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, ইকবাল হোসেন অপু এমপি ও আলহাজ মো. সাঈদ খোকন। জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকার সম্মতি দিয়েছেন। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের ১০টি সাংগঠনিক ইউনিটের অধীনে সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা সম্মেলন করা হয়েছে। যদিও ২-১টা উপজেলার সম্মেলন এখনো করা সম্ভব হয়নি- এটা জেলা সম্মেলনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। এ ছাড়া সম্মেলন সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক সভাপতিত্ব করবেন। সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এমপির সঞ্চালনায় জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।

 

সর্বশেষ খবর