ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। দুই নদীর করাল গ্রাসে ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে বসতঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকান। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীতীরের বাসিন্দারা। নির্ঘুম রাত কাটছে অনেকের। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কয়েক দফা বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে ঝালকাঠি জেলা। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে দেখা দেয় ভাঙন। গত তিন মাসে নদীতে হারিয়ে গেছে নলছিটির বহরমপুর, খাজুরিয়া, অনুরাগ, বারৈকরন, সরই, হদুয়া, সদর উপজেলার পোনাবালিয়া, দেউরি, দিয়াকুল, কিস্তাকাঠি, রাজাপুরের বাদুরতলা, মানকিসুন্দর, নাপিতের হাট, চল্লিশকাহনিয়া, উত্তর পালট, বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকা ও দক্ষিণ বড়ইয়া এলাকার বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
৮০ বছর বয়সী বিধাব দুধমেগের বেগম জানান, বিষখালীর ভাঙনে চারবার ভেসে গেছে তার বসতঘর। জমিও তিনবার নদীর পেটে চলে যাওয়ায় এখন সর্বস্বান্ত হয়ে অন্যের জমিতে খুপরি ঘর তুলে একাই বসবাস করছেন তিনি। বিষখালী নদীর পাড়ে এভাবে অর্ধশত পরিবার আছে যাদের দিন ও রাত কাটে আতঙ্কে। মুখে ঝালকাঠি সদরের চরকাঠি, ভাটারাকান্দা, কৃষ্ণকাঠি, দেউরী, দিয়াকুল, নলছিটি উপজেলার বহরমপুর, ষাইটপাকিয়া, মল্লিকপুর, কাজিপাড়া, তিমিরকাঠি, হদুয়া ও রাজাপুরের মঠবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লঞ্চঘাট, বাদুরতলা, কাচারিবাড়ী বাজার, চল্লিশকাহনিয়া ও মানকি সুন্দর গ্রামের ফসলি জমি, বসতঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এসব এলাকার মানুষের ভয়ে দিন কাটে। যে কোনো সময় এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীতে বিলীন হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হাসান বলেছেন, লঘুচাপ ও নিম্নচাপে সৃষ্ট বন্যায় ভাঙন বেড়ে যায়। সে বিষয়টি বিবেচনা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে কিছু এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করতে টেকসই বাঁধ দিতে হবে। নদীভাঙন রোধে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি নদীভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে বছরের অধিকাংশ সময়ই ভাঙন থাকে। বহু মানুষকে বাস্তুহারা করেছে সর্বনাশা সুগন্ধা ও বিষখালী। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় লিখিত ও মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।