প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ ১৯ বছরেও টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা আমিনুর রহমান খান বাপ্পী হত্যা মামলার বিচার হয়নি। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ইন্ধনে বাপ্পীকে খুন করা হয় বলে জানান তার বাবা টাঙ্গাইলের-৩ আসনের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান। নিহতের ছোট ভাই টাঙ্গাইল-৩ ঘাটাইলের সাবেক সংসদ সদস্য ও টাঙ্গাইলের ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি (জামিনে থাকা) আমিনুর রহমান খান রানা বলেন, আমরা বিচার পাব বলে অপেক্ষায়।
বড় ভাই বাপ্পী ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর রমজান মাসের তারাবি শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের দুর্গ ভাঙতে পূর্বপরিকল্পনা করে চারদলীয় জোট সরকারের সহায়তায় ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে আমিনুর রহমান খান বাপ্পীকে। রানা আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাপ্পী হত্যা মামলার বিচার কাজ পুরোদমে শুরু হয়। তখন থেকেই ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা মামলার বিচারকাজ বন্ধ করতে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করে। এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা সফল হন। এর অংশ হিসেবে বাপ্পী ও তার ভাইদের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে কৌশলে হত্যা করে। যে হত্যা মামলায় বাপ্পী হত্যা মামলার ছয় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে আসামি করা হয়। যার ফলে বাপ্পী হত্যা মামলার বিচারকাজ আটকে রয়েছে বলেও জানান সাবেক এ সংসদ সদস্য। টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ রাজিব বলেন, নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর হরতাল-প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুরো টাঙ্গাইল শহর অচল হয়ে পড়ে। বাপ্পী হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে দিনের পর দিন চলতে থাকে প্রতিবাদ সভাসহ আন্দোলন। এরই অংশ হিসেবে একই বছর ৬ ডিসেম্বর রবিবার টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা যোগ দিয়ে বাপ্পীকে আওয়ামী লীগের রত্ন উল্লেখ করে বক্তৃতা করেন এবং সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতিও দেন। মামলার সহকারী আইনজীবী মু. নাসির উদ্দিন বলেন, ২০০৩ সালের ২২ নভেম্বর মামলা রেকর্ড হওয়ার পর থেকেই আসামিরা ক্ষমতাশালী বলে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার ও সময় দীর্ঘ করার নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। এ মামলার মোট ২০ আসামির মধ্যে ১৭ জনের নামে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি। তারপর থেকেই ২৭ সাক্ষীর মধ্যে শেষ সাক্ষীর জেরা চলমান রয়েছে বলেও জানান এ হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের সাংবাদিকদের বলেন, এক সময় টাঙ্গাইলের উদীয়মান আওয়ামী লীগ নেতা বাপ্পীকে যারা হত্যা করেছে তাদের প্রত্যেকের বিচার হওয়া জরুরি। আজ ২১ নভেম্বর সকালে শহীদ আমিনুর রহমান খান বাপ্পীর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইল-৩ সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান। এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আমিনুর রহমান খান বাপ্পীর পরিবার। পরে শোক র্যালি, কবর জিয়ারত, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।