রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কাজে আসছে না কোটি টাকার পুকুর পুনঃখনন প্রকল্প

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

কাজে আসছে না কোটি টাকার পুকুর পুনঃখনন প্রকল্প

রাজবাড়ীতে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতেই পুকুরে মাছ চাষ। অযত্ন, অবহেলা ও তদারকির অভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে পুকুরের পানি। গ্রীষ্মকালে সুপের পানির সংকট দূর করতে ১৬টি পুকুর পুনঃখননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬২টাকা ব্যয়ে পুকুরগুলোর পুনঃখনন কাজ শেষ করা হয়েছে ২০২১ সালে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর একদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক এই প্রকল্প কোনো কাজে আসেনি। নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে লিজ প্রদান করা হয়েছে। সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আবদুল জব্বার থাকাকালীন সময়ে লিজ প্রধান করা হয়েছে। এসব পুকুরে করা হচ্ছে মাছ চাষ। বেশ কয়েকটি পুকুর অযত্ন-অবহেলা ও তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে তথ্য অধিকারের মাধ্যমে আবেদনের প্রেক্ষিতে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রাজবাড়ীতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তিনটি প্যাকেজে ২০২১ সালে কাজ শেষ করে বিভিন্ন ঠিকাদার। ১৬টি পুকুর পুনঃখননে ব্যয় হয় ১ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬২টাকা। খননের পর জেলা পরিষদের একটি দল পরিদর্শকপূর্বক পুকুর বুঝে নিয়েছেন। জেলার শহীদ ওহাবপুর, খানখানাপুর, মিজানপুর, বসন্তপুর, মূলঘর, দাদশী, পাট্টা, মদাপুর, জামালপুর, জঙ্গল ও নবাবপুর ইউনিয়নের পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পুকুরের গভীরতা হবে ৫ থেকে ৭ মিটার। চারপাশে কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি পুকুরের অপব্যবহার রোধে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতে হবে। সেখানে একটি ফটক থাকবে। চারপাশে হাঁটার জন্য থাকবে ইটের রাস্তা। পুকুরপার রক্ষার জন্য থাকবে বেষ্টনী। পুকুরগুলো জেলা পরিষদের হওয়ার কারণে জেলা পরিষদের সদস্যের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদারকি টিম থাকবে। পুকুরের পানি সুপেয় রাখতে মাছ চাষ ও গৃহস্থালির কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরেজমিন বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তুলসীবরাটে অবস্থিত একটি পুনঃখননকৃত পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরপার রক্ষার জন্য বেষ্টনী ভেঙে গিয়েছে। ১২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে পুকুরটি পুনঃখনন করা হয়। সেই পুকুরের পানিতে ভাসছে কচুরিপানা। এ বছর পুকুরে পাট পচানোর কারণে কচুরিপানার স্তূপে পচন ধরেছে। সেখানে মুরগি বিভিন্ন খাবার খাচ্ছে। পায়খানা করছে মুরগিগুলো। হাঁটার রাস্তার ইট খোয়া গেছে। কিছু জায়গার কাঁটাতারের ঘেঁষে গবরের জ্বালানি রাখা হয়েছে। সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের রষোড়া গ্রামে ১২ লাখ ৪০ হাজার ব্যয়ে পুকুর পুনঃখনন করা হয় ২০১৯ সালে। স্থানীয়দের সুপেয় পানির জন্য পুকুর পুনঃখনন করা হলেও কোন নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে পজলা পরিষদ থেকে লিজ প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় আব্দুল হামিদ শেখ বলেন, আমরা জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করছি। তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে। জেলার বাকি পুকুরগুলো দখল-দূষণে পরিণত হয়েছে বলে জানা  গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আনোয়ার শেখ বলেন, রাজবাড়ীতে পুনঃখননকৃত এসব পুকুর থেকে কোনো সুবিধা পায়নি স্থানীয়রা।

প্রতিটি পুকুর শুধু পুনঃখননে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এসব পুকুর পুনঃখননে এত টাকা ব্যয় ধরা ঠিক হয়নি। জামালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হরসিত বিশ্বাস বলেন, আমি তো জানিনা এসব পুকুরে গৃহস্থলির কাজ করা নিষেধ। আমরা এখানে অবাধে সব ধরনের কাজ করি। এবার পুকুরে পাট পর্যন্ত জাগ দেওয়া হয়েছে। এই পুকুরের পানি সুপেয় হবে এটা কোনদিন এই অঞ্চলের মানুষ বিশ্বাস করবে না।রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী নাদিয়া ফেরদৌসী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ছিল ১৬টি পুকুর পুনঃখনন। এসব পুকুর থেকে গ্রামের মানুষ সুপেয় পানি পান করবে। আমরা ১৬ টি পুকুর পুনঃখনন করে জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করেছি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ বলেন, আমরা নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি পুকুরগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে সরকারি নীতিমালা মেনে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর