মহান স্বাধীনতাযুুদ্ধে যারা এ দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে যুদ্ধ করেছিলেন, জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার জন্য সরকারের এবার অনন্য উদ্যোগ বীরনিবাস। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা জেলার ২৯২ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫১ বছর যে সব মুক্তিযোদ্ধা জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করতেন, সে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখন সুদৃশ্য দালানে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছেন। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বিজয়ের এ মাসে প্রথম পর্যায়ে ৮০টি ঘর হস্থান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, অসচ্ছল সাতক্ষীরার সব মুক্তিযোদ্ধাকে বীরনিবাস প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও জানান, সরকার অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীরনিবাস আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এর অংশ হিসেবে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলার ২৯২টি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে এর আওতায় এনেছে। প্রথম পর্যায়ে ৮০টি বাড়ি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২১২টি গৃহ নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪১টি। তালা উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে আটটি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৪টি। কলারোয়া উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৪টি। কালিগঞ্জ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৩টি। আশাশুনি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৮টি। দেবহাটা উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২টি। শ্যামনগর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
২২ ফুট প্রস্থ আর ২৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে বীর নিবাসে রয়েছে দুটি বেড রুম, একটি ড্রইং ও একটি ডাইনিং রুম, একটি রান্না ঘর, দুটি বাথ রুম। রয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা। সরকারের এমন নান্দনিক উদ্যোগে ভীষণ খুশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার। সাতক্ষীরা পলাশপোল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস আলী জানান, তার দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে একটি জরাজীর্ণ টিনশেডের ঘরে বসবাস করতেন। দীর্ঘ ৫০ বছর পর সরকারের নিকট থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরূপ একটি বীর নিবাস ঘর উপহার পেয়েছেন। তিনি আরও জানান, শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর নয় দেশব্যাপী গরিব অসহায় এবং ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। এটি পৃৃথিবীর বুুকে এক অনন্য দৃৃষ্টান্ত। অন্য কোনো দেশে রাজা-বাদশা এ রকম ঘর তৈরি করে দিয়েছেন এমন নজির এখনো আমাদের চোখে পড়েনি। এ জন্য তিনি প্রচ- খুশি এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বিরল দৃৃষ্টান্ত দেখে, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে তাঁর জন্য দেশবাসীর কাছে ভোট চাইলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। কামাননগরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য শাফিয়া বেগম জানান, তাঁর চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। কিছু দিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের একটি খড়ের ছাউনি কুঁড়ে ঘর ছিল। সেখানে তাঁর চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা অতিকষ্টে বসবাস করতেন। মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ বীর নিবাসের একতলা বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং পেয়েছেন। তাতে তারা বিজয় খুুশি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, বিজয়ের এ মাসেই ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে ৮০ জনকে ঘর দেওয়া হবে। আর পর্যায়ক্রমে জেলার সব অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বীর নিবাসের আওতায় আনা হবে। বীর নিবাসের প্রতিটি গৃহ নির্র্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা।