শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

সড়কে ট্রাক্টর ট্রলির বেপরোয়া চলাচল

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

সড়কে ট্রাক্টর ট্রলির বেপরোয়া চলাচল

নওগাঁর সড়কগুলোতে দিন দিন অবৈধ ট্রলি ও ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল বেড়েই চলছে। যার ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার। সরকারের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে এই যানবাহনগুলোর চলাচল ধার্য করা না গেলে আগামীতে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। মহাসড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদে এসব অবৈধ যানবাহনের উৎপাতে অতিষ্ঠ স্কুলগামী কমলমতি শিশু-কিশোরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রশিক্ষিত চালক না দিয়ে এই যানবাহনগুলো চালানোর কারণে প্রতিনিয়তই জেলার ১১টি উপজেলার কোনো না কোনো স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও এগুলোর বিকট শব্দের কারণে ঘটছে শব্দদূষণও। ফলে স্কুলগামী শিশু-কিশোরসহ জনসাধারণকে সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। কিন্তু চোখের সামনে অবৈধ এই যানের অবাধ চলাচল দেখেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। বিশেষ করে বিভিন্ন মাঠের মাটি কেটে পরিবহনের কাজে এই অবৈধ যানের কোনো বিকল্প নেই। যার কারণে সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে সড়ক কিংবা গ্রামীণ রাস্তাগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ওই নষ্ট হওয়া সড়ক কিংবা রাস্তাগুলো সংস্কার কিংবা মেরামত কাজে ব্যাপক লোকসান দিতে হচ্ছে সরকারকে। ট্রলি ও ট্রাক্টরের ড্রাইভারদের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় অতি সহজেই এসব পরিবহন কিনে আনছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এসব ট্রাক্টর কিনে কৃষিকাজের পরিবর্তে ব্যবহার করছে মাটি বহনের কাজে। ফলে জেলায় ট্রাক্টরের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা যায়, চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত এই ট্রাক্টর অবৈধ ট্রলি-নছিমনসহ নানা পরিবহনে রূপান্তরিত হয়ে মানুষের সর্বনাশ করছে। আবাদি জমি ছেড়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে জেলা সদরসহ গ্রামীণ জনপদ কিংবা বাজারকেন্দ্রিক জায়গাগুলোতে। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় শিশু কিংবা কিশোররাও অদক্ষভাবে এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাচলের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। পথচারী আকমল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবৈধ ট্রলি ও ট্রাক্টর রাস্তাঘাট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও এসব বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। স্কুলপড়ুয়া সৌরভ বলেন, প্রতিদিন সকাল হলেই আমাদের স্কুলে যেতে হয়। ট্রাক্টরের বেপরোয়া গতির ফলে ধুলাবালিতে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে এই ধরনের অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছি। সড়কে ট্রাক্টরের চলাচল কিংবা পণ্যসামগ্রী বহনের অনুমতি নেই, আমরা ট্রাক্টর চালকদের নিষেধ করছি। সড়ক নিরাপত্তার জন্য এসব অবৈধ যান চলাচল করতে দেওয়া হবে না- মর্মে প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি। তবে সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা যদি সবাই ধৈর্যসহকারে নিয়ম মেনে চলাচল করি তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে বলে আমি আশাবাদি। জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, এই বাহনে করে খোলা অবস্থায় সড়কের ওপর দিয়ে মাটি বহন না করতে গত বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সর্বোপরি সড়ক ও মহাসড়কে যান চলাচলের সময় নিয়ম মেনে ও নিরাপদ গতিতে চলাচল করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর