সোমবার, ১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় দুস্থদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঈদের আগে বিতরণের কথা থাকলেও বিতরণ করা হয়েছে ঈদের দুই দিন পর। এর সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে বিতরণের তালিকায় নয়ছয়, ওজনে কম দেওয়ার। তবে শেরপুর পৌরসভার মেয়র এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অপরদিকে এ ঘটনায় উপকারভোগীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলর। তারা বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের নিকট জোর দাবিও জানিয়েছেন। জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারিভাবে শেরপুর পৌরসভায় ৪ হাজার ৬২১ দুস্থ নারী-পুরুষের মাঝে বিতরণের জন্য ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির আওতায় ৪৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ চালগুলো ঈদের প্রায় সাত দিন আগে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে গরিব-অসহায়, দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ওয়ার্ডভিত্তিক বিভাজন নিয়ে মেয়র-কাউন্সিলরদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এতে করে এ ভিজিএফের চাল বিতরণ কার্যক্রম থেকে সরে যান একাধিক কাউন্সিলর। পরে তাদের বাদ রেখেই মেয়র এককভাবে ঈদের আগের দিন শুক্রবার থেকে চাল বিতরণ শুরু করেন। যা ঈদের দুই দিন পর গত সোমবারও বিতরণ করা হয়। কিন্তু অনেকেই এ চাল পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। শেরপুর উপজেলার পূর্ব ঘোষপাড়ার বাসিন্দা বেবি খাতুন, মালেকা বিবি জানান, আমরা গরিব মানুষ, সংসারে প্রচ- অভাব। খুবই কষ্টে রোজা করেছি। বিগত বছরে ঈদের সময় চাল পেলেও এবার কোনো চাল পাইনি। চালের জন্য পৌরসভায় একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোনো চাল পাইনি। অথচ আমাদের এলাকার স্বচ্ছল ব্যক্তিরা এবার চাল পেয়েছেন। শুনেছি তারা মেয়র সাহেবকে ভোট দেন, তাই আমাদের বাদ দিয়ে ওইসব ব্যক্তিদের চাল দেওয়া হয়েছে। গোসাইপাড়ার গোপাল সাহা, জগন্নাথ মোহন্ত অভিযোগ করে বলেন, চাল বিতরণে এবার নয়ছয় হয়েছে। প্রকৃত ব্যক্তিদের না দিয়ে নিজেদের লোকজনের মাধ্যমে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে সাত কেজি করে। যা বিগত সময়ে কোনো দিন হয়নি। শেরপুর পৗরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিমাই ঘোষ জানান, এবার ভিজিএফ চাল বিতরণ কার্যক্রমে আমি জড়িত ছিলাম না। তাই কারা চাল পেয়েছেন, আর কারা পাননি তা বলতে পারব না। তবে এবার ভিজিএফ চাল বিতরণে হযবরল অবস্থা হয়েছে বলে শুনেছি। তিনি আরও বলেন শেরপুর পৌরসভার মধ্যে দুস্থ মানুষের সংখ্যা ও অবস্থানের দিক দিয়ে তার ওয়ার্ড দ্বিতীয়। তাই প্রতি বছর ৬০০ দরিদ্র মানুষকে এ চাল দিয়ে থাকি। কিন্তু এবার হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই সে তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়। এমনকি ১০০ দুস্থ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে চাল বিতরণ এবার স্বচ্ছ হবে কি না, এমন শঙ্কা থেকেই এ কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে রাখেন তিনি। একই মন্তব্য করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম খোকন।

সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শারমিন আক্তার বলেন, বেশির ভাগ কাউন্সিলর এবার ভিজিএফ চাল বিতরণে সম্পৃক্ত ছিলেন না। নির্দিষ্ট সময়ে চাল বিতরণ করা হয়নি। ঈদ উপলক্ষে চাল দেওয়া হলেও ঈদের পর চাল বিতরণ করা হয়। ফলে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উপকারভোগীদের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। শেরপুরের ট্যাগ অফিসার উপজেলা উদ্ভিদ ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, এবার নিয়ম মেনে পৌরসভায় চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডগুলোয় কখন চাল বিতরণ করা হয়েছে তা আমাকে জানানো হয়নি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।  শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, শেরপুর পৌরসভায় ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা বলেন, সব নিয়ম মেনেই এবার ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। এ ছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক ভিজিএফ কার্ডের বিভাজন নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিরোধ হলেও সেটি সমাধান হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর