শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ায় এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি ২০ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি ২০ শিক্ষার্থী

পরীক্ষাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ায় এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি ২০ শিক্ষার্থী। পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন কলেজে তাদের ভর্তিই করা হয়নি। কলেজের সব ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তারা। ক্লাসও করেছেন নিয়মিত। অন্য সব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সকালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় জানতে পারলেন তারা কলেজের শিক্ষার্থী নন। ভর্তির সময় প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে। পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে ২০ শিক্ষার্থী জানতে পারেন উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে তাদের ভর্তিই করানো হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের কর্মচারীদের প্রতারণার কারণে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারলেন না। প্রায় দুই বছর নিয়মিত ক্লাস করে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য তারা কলেজে প্রবেশপত্র আনতে যান। তখনই তারা এসব তথ্য জানতে পারেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান কলেজে কর্মরত হারুনুর রশিদ এবং আবদুল হান্নান নামে দুই কর্মচারী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জানান, এসএসসি পাস করার পর নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনে তারা বগুড়ার একাধিক কলেজের নামে ভর্তির চয়েস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার একটিও কার্যকর হয়নি। পরে তারা লোকমুখে জানতে পারেন সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে অফলাইনে এইচএসসিতে ভর্তি করা হচ্ছে। এরপর তারা ওই কলেজের দুই পিওন হারুনুর রশিদ এবং আবদুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভর্তির জন্য তারা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান আরও জানান আমি হারুনের কাছে ১০ হাজার টাকা দিলে তিনি আমাকে কলেজে ভর্তির রশিদ দেন। তারপর আমি কলেজে ক্লাস করতে থাকি। পরে পরীক্ষা এবং ফরম পূরণসহ বিভিন্ন সময় কলেজে এবং বোর্ডে জমা দেওয়ার কথা বলে তিনি আরও টাকা হাতিয়ে নেন। নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি আমি টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। এবং ফরম পূরণ করি। চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র চাইলে তিনি গত ১৬ আগস্ট সকাল ১০টায় কলেজে যেতে বলেন। ওইদিন কলেজে গেলে তিনি বলেন প্রবেশপত্র প্রিন্ট হয়নি। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে আনতে হবে। আমি রাজশাহী যাচ্ছি তোমরা অপেক্ষা কর। আরেক শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার জানান, আমাকে প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য হারুন পরীক্ষার দিন গত বৃহস্পতিবার ভোরে কলেজে যেতে বলেন। সকাল থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অপেক্ষার পর তাকে কলেজে না পেয়ে ফোন দিলে হারুন ফোন রিসিভ করেননি। পরে আমিসহ অন্যরা পরীক্ষা কেন্দ্র পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে সেখানে আমাদের কোনো সিট খুঁজে পাই না। এরপর কলেজে এসে জানতে পারি আমাদের ভর্তিই করানো হয়নি। ভর্তির রসিদসহ যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল এর সবকিছুই নকল ছিল।

কলেজে সবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় পাঁচ থেকে সাতজন একই রকম প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। তবে ওই সময় কলেজের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। কলেজ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন কলেজ স্টাফদের একটি সিন্ডিকেট গোপনে এসব প্রতারণার কাজ করছেন। হারুন ছাড়াও এই সিন্ডিকেটে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান জানান, গত বুধবার থেকে আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পেয়েছি। যারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসে ঘুরে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি প্রতারণার কথা। শাহ সুলতান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইয়ুব আলী জানান, ওই শিক্ষার্থীরা দুই বছরে কখনো কোনো শিক্ষকের কাছে আসেনি। যদি আসত তাহলে হয়তো এ সমস্যা হতো না। হারুনুর রশিদের বিষয়ে তিনি জানান, এর আগে অনৈতিক কাজে বরখাস্ত হয়েছিলেন হারুন। সে সময় তিনি এমন অপরাধ আর করবেন না এই মর্মে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সরকারি শাহ সুলতান কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রেজাউন নবী জানান, আমি বিগত সময়ের ঘটনা বলতে পারব না। কয়েক মাস হলো আমি এই কলেজে যোগদান করেছি। ভর্তির নামে প্রতারণার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি গঠন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু জানান, বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে গেছে। বিষয়টি খুবই মর্মাহত। তদন্ত সাপেক্ষে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

 

সর্বশেষ খবর