শিরোনাম
শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধান খেতে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

ধান খেতে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

বগুড়ায় আমন খেত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ায় মাঠে মাঠে এখন আমন ধানের সমারোহ। এ নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অধিকাংশ খেতে আমন চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, খেতে কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, সময়মতো সার, কীটনাশক প্রয়োগে এ ধানের বাম্পার ফলন হবে, আশা করছেন কৃষক ও বগুড়া কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা জানান, শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত কৃষকরা আমন চারা রোপণ করে থাকেন। কিন্তু এবার শ্রাবণের শুরুতে অঝোরে ঝরেনি বৃষ্টিধারা। কয়েকদিন বৃষ্টি না থাকায় মাঠ শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছিল, তাই মলিন ছিল কৃষকের মুখের হাসি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক কৃষক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহালেও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বগুড়ার কৃষক। বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে মাঠে আমন চারা রোপণের ধুম পড়ে যায়। যদিও অনেক এলাকায় কৃষকরা সেচের পানি দিয়েই আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। এখন নিবিড় পরিচর্যা ও সময়মতো সারপ্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ধান ফলানোর জন্য মাঠে নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষক। জেলার শিবগঞ্জ, শেরপুর, নন্দীগ্রাম উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমন ধানের আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়াও সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শাজাহানপুর, আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় আমন চাষ করে কৃষকরা। কৃষি অফিস আশা করছে, এ বছর আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধান উৎপাদন অনেক ভালো হবে। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৩৪ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ২৫০ হেক্টর। বাকি ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ চলছে। গত বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। বন্যায় ক্ষতি বাদ দিয়ে ফসল কর্তন হয়েছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমির। সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের কৃষক মুসা মন্ডল জানান, ৫ বিঘা জমিতে তিনি আমন আবাদ করেছেন। শুরুতে বৃষ্টি না থাকায় দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। জমিতে এখন পানি রয়েছে। ধানের চারা বড় হতে শুরু করেছে। বৃষ্টি আমন ধানের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। এখন সার, কীটনাশক প্রয়োগসহ জমির সঠিক পরিচর্যা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলনের আশাবাদী তিনি। বগুড়া সদর উপজেলার আরেক কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, যদি অতি বন্যা না হয় তাহলে আমনের বাম্পার ফলন হবে। তবে এ বছর শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় ধান চাষে খরচ অনেক বেশি।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকৃতির বৈরিতার কবলে না পড়লে এবং ঠিকমতো সোনালি ধান ঘরে তুলতে পারলে লাভবান হবে বগুড়ার কৃষক। গত বছর ধান ও চালের দাম চড়া হওয়ায় অন্য ফসল চাষ ছেড়ে আমন চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে আষাঢ় মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আমন ধান চাষ নিয়ে জেলার কৃষকরা দুশ্চিন্তায় ছিল। শ্রাবণে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কৃষকের আশা জুগিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। উৎপাদনে সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন, আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও সরকারের সঠিক নীতি।

সর্বশেষ খবর