সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পাট চাষিরা

মিলছে না কাক্সিক্ষত দাম, আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পাট চাষিরা

লালমনিরহাটে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত কিষান-কিষানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করেও পাট বিক্রি করতে পারেননি কৃষক আবু সাইদ। কাক্সিক্ষত মূল্য না পেয়ে হাটে তুলেও পাট নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। এখন লোকসানের হিসাব কষে চিন্তিত তিনি। এই কৃষক বলেন, অনেক আশা নিয়ে পাট আবাদ করেছি। এখন মূল্য পাচ্ছি না। খরচাপাতি বেশি অথচ দাম নেই। পাটের মণ ৪ হাজার টাকা হলে আমরা লাভবান হতাম। দাম না বাড়লে পাট চাষ করে পুঁজি উঠানোই সম্ভব হবে না। কৃষক সাঈদের বাড়ি লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার নিথক গ্রামে। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমরা তো সরকারের কাছে আগে থেকেই পাটের দাম বাড়ানোর জন্য দাবি করে আসছি। চারদিকে শুধু সিন্ডিকেট। এখন সারের দাম বেশি, মজুরিও বেশি। কিন্তু পাটের ন্যায্যমূল্য নেই। সরকার ভর্তুকি দিলে কৃষক বাঁচত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর বেশি দামে কিনে রাখা অনেক পাট ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের গুদামে রয়ে গেছে। এ বছর নতুন পাট বাজারে এলেও তারা ভালো দাম হাঁকছেন না। তাই বেশি দাম পাট কিনে রাখার মতো সাহস পাচ্ছেন না প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। মিলমালিক ও বড় ব্যবসায়ীদের থেকে সাড়া পেলে তবেই পাটের দাম বাড়বে। এদিকে খরার কারণে জাগ দিতে না পারায় কোথাও কোথাও খেতেই পাট শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে। যারা বাড়তি খরচের ধকল সামলে পাট জাগ দিয়ে সোনালি আঁশে স্বপ্ন বুনেছেন এখন তারাও হতাশ সিন্ডিকেটের মারপ্যাঁচে। চাষিরা বলছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পাটের আবাদ করেছেন তারা। উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বাড়ছে হতাশা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমানোয় লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিংসহ ভর্তুকি দিতে সরকারের সুনজর প্রয়োজন বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। হাতিবান্ধা উপজেলার বড়খাতা হাটে গিয়ে দেখা যায়, পাটগ্রাম, কালিগঞ্জ, আদিতমারী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ডিমলা ও ডোমার উপজেলা থেকে অনেক চাষি এসেছেন এই হাটে পাট বিক্রি করতে। দুই সপ্তাহ আগে এখানে মানভেদে প্রতি মণ দেশি, তোষা এবং মেস্তা পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই পাট এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর লালমনিরহাটের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, পাট আবাদে কৃষকের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। কারণ পাট পচানোর জায়গা নেই। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া পাট যে মৌসুমে হয় ওই মৌসুমেই অন্য ফসলে তুলনামূলকভাবে বেশি আয় করা সম্ভব হয়। অনেকে লাভের হিসাব করে পাট আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর