রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরগরম কাজিপুরের কম্বলপল্লী

৫০-৬০ দোকানে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার বেচাকেনা

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সরগরম কাজিপুরের কম্বলপল্লী

কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শীত আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কম্বলপল্লী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ শ্রমিকরা কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত। শ্রমিকরা বলছেন, সংসারের কাজের পাশাপাশি কম্বল তৈরি করে তারা সচ্ছল হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দামে কম আর মানে ভালো হওয়ায় কাজিপুরের কম্বলের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।  জানা যায়, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শিমুলদাইড়, বরশীভাঙ্গা, সাতকুয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মসলিমপাড়া, মানিকপটল, গাড়াবেড়, রশিকপুর, হরিনাথপুর, ভবানীপুর, মাথাইলচাপড়, রৌহাবাড়ী, পলাশপুর, বিলচতল, চকপাড়া, লক্ষ্মীপুর, বেলতৈল, চকপাড়া, চালিতাডাঙ্গা, কবিহার, হাটশিরা, মাইজবাড়ী ইউনিয়নের মাইজবাড়ী, পলাশবাড়ী, চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলদাইড়, চালিতাডাঙ্গা, মাধবডাঙ্গা, হরিনাথপুর ও গান্ধাইলসহ আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামে গড়ে উঠেছে কম্বল কারখানা। সেলাই মেশিনে ছোট ছোট ঝুট কাপড় জোড়া দিয়ে এবং বড় বড় থান কাপড় কেটে বাহারি ডিজাইনের কম্বল তৈরি করা হয়। এখনকার কম্বলের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতিবছরই পরিধি বাড়ছে এ শিল্পের। কম্বলশিল্প ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার বেকার যুবক, নারী ও পুরুষের। এখানে বাংলা, বিশ্বাস ও চায়নাসহ ১৬৬ রকমের কম্বল তৈরি হয়। কাজিপুরে ৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা মূল্যের কম্বল তৈরি হয়। এখানকার কম্বল ঢাকা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। প্রতিদিন বাজারের ৫০ থেকে ৬০টি দোকানে প্রায় কোটি টাকার কম্বল বেচাকেনা হয়। কম্বল কারিগর আঞ্জুয়ারা খাতুন ও খাদিজা খাতুন জানান, মহাজনরা ছোট ছোট ঝুট কাপড় আমাদের বাড়িতে দিয়ে যায়। আমরা সেলাই মেশিনের মাধ্যমে তা জোড়া লাগিয়ে বিভিন্ন মাপের কম্বল তৈরি করে থাকি। সংসারের কাজের পাশাপাশি এ কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচসহ নানা কাজে লাগাতে পারছি। এতে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসছে।

কারিগর আবদুল আলিম, আল-আমিন ও আনোয়ার হোসেন জানান, বিভিন্ন কলেজের ছাত্রও পার্টটাইম কম্বল সেলাই করে নিজেদের খরচের টাকা জোগাড় করছেন। ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ও আবদুল হান্নান জানান, ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টের ঝুট কাপড় স্বল্পদামে কিনে এনে এখানে কম্বল তৈরি করা হয়। এ ছাড়া চিটাংগং থেকে বড় বড় থান কাপড় কিনে এনে কেটে বাহারি ডিজাইনের কম্বল তৈরি করা হয়। কাজিপুরে প্রতিদিন কোটি টাকার কম্বল বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে কম্বল কিনে ট্রাকযোগে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। ব্যবসায়ী হালিমুর রহমান জানান, প্রায় ৪০০ ব্যবসায়ী, ৩৬ থেকে ৪০ হাজার মানুষ, বিশেষ করে নারীরা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই শিল্পটির প্রসারে বিভিন্ন পরিকল্পনার পাশাপাশি টাকা লেনদেনের জন্য ব্যাংক স্থাপনসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও প্রসার ঘটবে।  কাজিপুরের ইউএনও সুখময় সরকার জানান, কাজিপুরের কম্বলের খ্যাতি দেশজুড়ে। এ শিল্পের মাধ্যমে নদীভাঙন কবলিত ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। কম্বল শিল্পের প্রসারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে কম্বল ব্যবসায়ী ও পাইকারদের সুবিধার্থে ব্যাংক স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

সর্বশেষ খবর