বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধুমধামে বিয়ে বট-পাকুড়ের

দিনাজপুর প্রতিনিধি

ধুমধামে বিয়ে বট-পাকুড়ের

ঢাকঢোল বাজিয়ে ধুমধামে ব্যতিক্রমী বট আর পাকুড় গাছের বিয়ে হয়েছে দিনাজপুরে। শহরের বাসুনিয়াপট্টি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এ বট-পাকুড়ের বিয়ে হয়।

গতকাল সকাল ১০টায় নারায়ণ পূজার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পাকুড় গাছকে ‘বর’ ও বট গাছকে ‘কনে’ ধরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ বিয়েতে বর পাকড়ের বাবা-মা হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ ও দিপ্তী ঘোষ দম্পতি। কুমারী বটের বাবা হয়েছিলেন মুন্না সাহা, মাতা পূর্ণিমা সাহা। উভয়ের ঠিকানা চকবাজার, সদর, দিনাজপুর।

এর আগে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়। অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাপক সাজসজ্জা, গেট, আলোকসজ্জা এবং আল্পনা একে প্রস্তুত করা হয় ছাদনাতলা। গতকাল বিয়ে পড়ানোর জন্য ছিল চারজন পুরোহিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করার বিশ্বাস থেকে বটপাকুড়ের এ বিয়ে। অশ্বত্থাদিবৃক্ষ বটেশ্বরি-পাকুড়েশ্বর প্রতিষ্ঠা করা হবে, জানায় আয়োজকরা।

বিয়ে অনুষ্ঠান সূচিতে ছিল, গতকাল সকাল ৬টায় অধিবাস, সকাল ১০টায় নারায়ণ পূজা, দুপুর দেড়টায় মধ্যাহ্ন প্রসাদ বিতরণ। এর পর দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে বিয়ে ও যজ্ঞানুষ্ঠান।

সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পরিবেশিত হয় কবি গান। কবিগান পরিবেশন করেন চিরিরবন্দর উপজেলার বাবুল সরকার ও খানসামার চন্দনা রানী সরকার।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে জাকজমকভাবে বট ও পাকুড় গাছের এ বিয়ের আয়োজন করেছেন এলাকাবাসী ও ভক্তবৃন্দ।

পুরোহিত দীপক চক্রবর্তী মূল আনুষ্ঠানিকতার দায়িত্বে ছিলেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী বট পাকুড়ের বিয়ে কথাটি প্রচলিত থাকলেও হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সঠিকটি হলো অশ্বর্থ-বট বৃক্ষ প্রতিষ্ঠা। দুপুরে মন্ত্র পড়ে অশ্বর্থ-বটের প্রতিষ্ঠার কাজটি সম্পন্ন করেছেন তিনি। তার সঙ্গে আরও দুজন পুরোহিত ছিলেন অপূর্ব চক্রবর্তীম অনুপ চক্রবর্তী।

রং-বেরঙের কাপড় দিয়ে নির্মাণ করা হয় সুসজ্জিত দুটি গেট। অতিথিদের দেওয়া হয় নিমন্ত্রণপত্র। অতিথি আপ্যায়নে ছিল নিরামিষ খাবার। কমতি ছিল না কোনো কিছুর। জাঁকজমকপূর্ণ ব্যতিক্রমী এ বিয়েতে আসে আশপাশের শতাধিক পরিবার।

এ ব্যাপারে আয়োজক দিলীপ ঘোষ বলেন, প্রকৃতির মঙ্গলের জন্য বট ও পাকুড়গাছের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যেভাবে মানুষের বিয়ে হয়, সেভাবে বট-পাকুড়ের বিয়ে  দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়।

তিনি আরও জানান, হিন্দু শাস্ত্রে আছে বট-পাকুড় পাশাপাশি থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। রীতি চরিতার্থ করার স্বার্থেই এ আয়োজন। বট-পাকুড় এখন আজীবন এভাবে পাশাপাশি থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বট-পাকুড়ের বিয়েতে মানুষের বিয়ের মতোই উৎসব হলেও লগ্ন হয় না। তবে অন্যান্য সব আয়োজন ছিল।

গাছের বিয়ের ব্যাপারে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত ঘোষ জানান, প্রকৃতি ও ব্যক্তির মঙ্গল কামনায় বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়। শহরের বাসুনিয়াপট্টি দুর্গামন্দিরে চকবাজার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীর মানুষ প্রকৃতির মঙ্গল কামনায় এমন বিয়ের আয়োজন করেন। বিয়ে ঘিরে ব্যাপক আনন্দ-উৎসব হয়।

 

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর