রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নদীর চর কাটার মহোৎসব

অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটায় বর্ষা মৌসুমে বাঁধে দেখা দেয় ভাঙন

ফেনী প্রতিনিধি

নদীর চর কাটার মহোৎসব

ফেনীতে এস্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে চরের মাটি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফেনীর পরশুরামে মুহুরি, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর চর কাটার মহোৎসব চলছে। নদীতীরের মাটি কাটার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের চাপে বাঁধ ভেঙে উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যা কবলিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার কৃষক ও মাছ চাষিরা।

জানা যায়, পরশুরাম উত্তর বাজারের খোন্দকিয়া দাসপাড়ার সামনে বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি কাটা হচ্ছে প্রতি রাতে। নিজকালিকাপুর নোয়াবাজার ব্রিজ সংলগ্ন বেড়িবাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা। মুহুরী নদীর পূর্ব সাহেবনগর স্টিল ব্রিজের গোড়ার মাটিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। রাত ৮টা থেকে শুরু করে ভোর ছয়টা পর্যন্ত মাটি কাটার মহোৎসব চলে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাতভর পরশুরাম বাজারের সড়ক দিয়ে মাটিবাহী শতাধিক পিকআপ চলে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবাধে কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে একটি চক্র। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ওই চক্র মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার পরও মাটি কাটা থামছে না। শনিবারও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং চিংনু মারমা মাটিভর্তি একটি পিকআপ আটক করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

কৃষিজমির মাটি কেটে নেওয়ায় তা ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া ও বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বেশিরভাগ উঁচু কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে এস্কেভ্যাটর মেশিন দিয়ে।

ওইসব স্থানে প্রশাসনের লোকজন যাওয়ার আগেই গাড়ি সরিয়ে নিতে এসিল্যান্ডের বাসার সামনে নিজস্ব লোকজন সেট করে রাখে মাটি ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। একটি সিন্ডিকেট মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন মাটিখেকোরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে চুক্তি করে এ কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা আরও জানান, ফসলি জমিতে ৫ থেকে ৬ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। পিকআপ থেকে মাটি সড়কে ছড়িয়ে পড়ায় বাতাসে ধুলাবালু ওড়ে। এতে পরিবেশের ক্ষতি ও সড়ক সর্বসাধারণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে। ধুলাবালুর কারণে মানুষের বসতবাড়িতে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান। তারা আরও জানান, মাটিখেকোদের হাত থেকে ফসলি জমি রক্ষা করা যাচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক অভিযানে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর