রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সহসা চালু হচ্ছে না জিকে সেচ প্রকল্প

হুমকিতে চার জেলার বোরো আবাদ

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

সহসা চালু হচ্ছে না জিকে সেচ প্রকল্প

পদ্মায় পানি কম, তার ওপর সরবরাহ খাল সাময়িক বন্ধ। এ কারণে সহসা চালু হচ্ছে না দেশের সর্ববৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়াসহ ৪ জেলার বোরো আবাদ। সেচে বহুগুণে ব্যয় বাড়ছে। সেই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মরুকরণের দিকে যাচ্ছে এ অঞ্চল। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় একটি চ্যানেল করে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে পাম্প করে তুলে ক্যানেলের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরায় কৃষি জমিতে সরবরাহ করা হয় জিকে প্রকল্পের মাধ্যমে। ভেড়ামারা পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জিকে প্রকল্পের প্রধান সরবরাহ খালের তিন নং ব্রিজের কাজ করছে সড়ক বিভাগ। এ কারণে মাটি ফেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে খাল। সড়ক বিভাগের কাজ শেষের দিকে, ৩০ তারিখে খাল উন্মুক্ত করে দেবে বলে তারা জানিয়েছে। প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, খাল উন্মুক্ত হলেও পদ্মায় পানি প্রবাহ এখন অনেক কম। প্রকল্পের চ্যানেলে এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে ৪ দশমিক ৫ আরএল মিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এখন গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৬ থেকে ৪ দশমিক ৭ আরএল মিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে। এতো কম পানি দিয়ে পাম্প চালানো সম্ভব নয়। এ জন্য সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর জোনে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে প্রকৌশলীরা বৈঠকে বসবেন। সংকুচিত জিকে প্রকল্প : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে একসময় বিপ্লব ঘটানো গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জি- কে) প্রকল্পের কার্যক্রম সংকুচিত হতে হতে এখন ৮ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে। পাম্প নষ্ট ও খালগুলো দখল-দূষণ হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ছে এ সেচ প্রকল্প। পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুষ্টিয়ার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, ৪ জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু এই প্রকল্পের। এর স্বর্ণযুগে ১৯৮৩ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। বর্তমানে এর আওতায় ৯৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু খালগুলোর বড় অংশ দখলে থাকা ও প্রকল্পের তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটিই নষ্ট হওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। রাশিদুর রহমান জানান, চার জেলার ১৩টি উপজেলায় এ কার্যক্রম বিস্তৃত।

প্রকল্পে প্রধান তিনটি খাল, ৪৯টি শাখা খাল ও ৪৪৪টি উপশাখা খাল রয়েছে। প্রধান খালের দৈর্ঘ্য ১৯৩ কিলোমিটার। শাখা খালগুলোর দৈর্ঘ্য ৪৬৭ কিলোমিটার ও উপশাখা খালের দৈর্ঘ্য হাজার কিলোমিটার। ১৯৫১ সালে পরিচালিত প্রাথমিক জরিপের পর ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে।

ব্যয় বাড়ছে সেচের : এ প্রকল্পের আওতায় বছরে ৬০০ টাকায় ১ একর জমিতে ৩ মৌসুমে সেচ দিতে পারেন কৃষকরা। স্যালো মেশিন কিংবা বৈদ্যুতিক পাম্প চালিয়ে সমান পরিমাণ জমিতে সেচ দিতে কৃষকের ব্যয় হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো।

হুমকিতে ৪ জেলার কৃষি : প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, শুষ্ক সময়ে এখানে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। অনেক এলাকায় পানি ওঠেই না। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুসহ অনেক এলাকায় জিকে না দিলে মানুষ খাওয়ার পানিও পায় না। জিকের পানি উপরিভাগে থাকায় পানির স্তর সাধারণত কিছুটা উঁচুতে থাকে। জিকের পানি না থাকলেও স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। এরই মধ্যে পানি কম আসছে, জানান পিয়ারপুর এলাকার কৃষক আরাফাত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিকে প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়লে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এ অঞ্চলের কৃষি।

সর্বশেষ খবর