সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

হাওরে অবাধে অতিথি পাখি শিকার

অপূরণীয় ক্ষতি জীববৈচিত্র্যের

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

হাওরে অবাধে অতিথি পাখি শিকার

মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে বিষটোপে মারা যাওয়া পরিযায়ী পাখি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হাওরবেষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওর, বাইক্কাবিলসহ ছোট-বড় আটটি হাওর। প্রতি বছর শীতের শুরুতে হাওরে অতিথি পাখি আসে। বিষটোপে ও শিকারিদের পাতা জালের ফাঁদে অবাধে মরছে বিভিন্ন প্রজাতির এসব পরিযায়ী পাখি। হাকালুকি হাওরে ২৭৩ বিল, ১০ নদী ও অসংখ্য খাল রয়েছে। এই বিল ও নদী অতিথি পাখির নিরাপদ খাবারের স্থান। স্থানীয় শিকারিরা বিভিন্ন কৌশলে অবাধে পাখি শিকার করে যাচ্ছে। শিকারিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে বেছে নিয়েছে বিষটোপ। কাউয়াদীঘি হাওরে প্রকাশ্যে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার চলছে। অন্য হাওরেও শিকারিরা নানা কৌশলে প্রতিনিয়ত পাখি শিকার করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত ২ জানুয়ারি হাকালুকি হাওরের জুড়ী অংশের নাগুয়া ও চাতলার বিলে পাখি দেখতে ও ছবি তোলার জন্য আসেন তিনজন আলোকচিত্রি। তারা দেখেন নাগুয়া বিলে ৩২টি পাখির মৃতদেহ। আশপাশে আরও কয়েকটি ধুঁকে ধুঁকে মরছে। সরেজমিন রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, গিরিম, লামা মিটুপুর, দলিয়া ও পিয়ালাসহ হাওরের চারপাশে শিকারিরা জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে রেখেছেন। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক প্রতিবেদককে বলেন, রাতে পাখি খাবার খেতে এসে জালে আটকা পড়ে। সকালে শিকারিরা ছাড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করে। স্থানীয়রা বলেন, পাখি শিকারিরা দুশ্চরিত্রের লোক হওয়ায় ভয়ে  কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। চাতলা বিলের ইজারাদার হাবিবুর রহমান বলেন, হাকালুকি হাওরে অন্য বছরের তুলনায় এবার পাখি তুলনামূলক কম। আগে অনেক পাখি দেখতাম। এবার এসব চোখে পড়ছে না। স্থানীয় একজন বলেন, হাকালুকি হাওরের পাখির অনেক দাম। দুটি হাঁস পাখি ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আবার কেউ কেউ অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন। পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা, শিকার, ক্রয়-বিক্রয় ও নিজের দখলে করে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শীত মৌসুমে একটি মহল পাখি শিকারের মতো নিকৃষ্ট কাজে জড়ায়। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এপিডেমিওলজি ও শৌখিন বন্যপ্রাণী চিত্রগ্রাহক ডা. রিজওয়ানুল করিম বলেন, হাকালুকি হাওরের নাগুয়া ও চাতলার বিলে পাখি দেখতে এবং ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলাম। তখন বিলে মৃত পাখি দেখে হতভম্ব হই। তিনি বলেন, এতে একদিকে জীববৈচিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে বিষযুক্ত পাখির মাংস খেয়ে সাধারণ মানুষ স্নায়ু, কিডনি, লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে এমনকি ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  বয়োবৃদ্ধ, গর্ভবতী ও শিশুদের বেলায় এই ঝুঁঁকি অনেক গুণ বেশি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খুব দ্রুত শিকারিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, পাখি শিকারের বিষয়টি আমরা আইনশৃঙ্খলা সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছি। হাওরে যাতে কোনো দুষ্কৃতকারী অতিথি পাখি শিকার করতে না পারে। পাখি শিকারে খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করছি।

সর্বশেষ খবর