শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দূষণ দখলে জি কে প্রকল্পের খাল

সেচ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

দূষণ দখলে জি কে প্রকল্পের খাল

কুষ্টিয়ার জিকে প্রকল্পের খালের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে একসময় বিপ্লব ঘটানো গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জি কে) প্রকল্পের কার্যক্রম সংকুচিত হতে হতে এখন ৮ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে। খালগুলো দখল-দূষণের শিকার হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ছে এ সেচ প্রকল্প।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান তিনটি খাল দখলমুক্ত থাকলেও শাখা ও উপশাখা খালের বড় অংশই দখল-দূষণের শিকার। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল মোড় থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক অটো রাইস মিল। সব মিলই কমবেশি দখল করেছে এসব খালের জমি। সেসব স্থান তারা পরিণত করেছে ড্রেনে। এর সঙ্গে সেখানে ফেলা হচ্ছে মিলের দূষিত বর্জ্য। এতে সেচ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। দূষিত বর্জ্য এসব খাল হয়ে যাচ্ছে কালীগঙ্গা নদীতে। এ ছাড়া ক্যানালের পাশে যেখানে বসতি গড়ে উঠেছে, সেখানেই দখলের শিকার হচ্ছে। এতে এসব খাল এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘অনেকে খাল দখল করে বাড়িঘর ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। ফলে জি কের বড় বড় ক্যানালে পানি থাকলেও আমরা পানি পাচ্ছি না।’ দখল-দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুষ্টিয়ার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘ক্যানালগুলো পুনরুদ্ধারে প্রকল্প নিয়েও খুব একটা কাজে আসেনি। এজন্য আপাতত দখলমুক্ত করার কাজ বন্ধ রয়েছে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন শীর্ষক একটি প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপি দাখিল করা হয়েছে। এটি পাস হলে একবারে সব খাল দখলমুক্ত করে পুরোদমে সেচকাজে ফিরতে চায় জি কে।’ জানা গেছে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরা জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু এ প্রকল্পের। প্রকল্পের স্বর্ণযুগে ১৯৮৩ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু খালগুলোর বড় অংশ দখলে থাকা ও প্রকল্পের তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটিই নষ্ট হওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের আওতায় বছরে ৬০০ টাকায় ১ একর জমিতে তিন মৌসুমে সেচ দিতে পারেন কৃষক। অন্যদিকে স্যালো মেশিন কিংবা বৈদ্যুতিক পাম্প চালিয়ে সমান জমিতে সেচ দিতে কৃষকের ব্যয় হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গত বছরও জি কে প্রকল্পের পানিতেই ধান চাষ করা কাথুলিয়া গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, ‘ক্যানালের পানি দিয়ে আমার ১ বিঘা জমি সেচের জন্য বছরে ইউনিয়ন পরিষদে ২০০ টাকা দিতে হয়।’ বটতৈল গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘একসময় আমরা বিনা ব্যয়ে ক্যানালের পানি দিয়ে জমি চাষ করতাম। নদী থেকে আসা মাছ খেতে পারতাম। কিন্তু খাল দখল-দূষণে মাছের দেখাও আর মেলে না।’ এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত চার জেলার ওপর দিয়ে গেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর অঞ্চল খরাপ্রবণ হয়। এ সমস্যার সমাধানে গ্রহণ করা হয় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘শুকনো সময়ে এখানে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। অনেক এলাকায় পানি ওঠে না। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডসহ অনেক এলাকায় মানুষ জি কে না দিলে খাওয়ার পানিও পায় না। জি কের পানি উপরিভাগে থাকায় পানির স্তর সাধারণত কিছুটা উঁচুতে থাকে। তা না হলে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়।’

সর্বশেষ খবর