শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বগুড়ায় বাণিজ্যিক মধু উৎপাদন

আড়াই কোটি টাকার উৎপাদন সম্ভাবনা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় বাণিজ্যিক মধু উৎপাদন

নন্দীগ্রাম উপজেলার দেরাহার মাঠে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে মধুর উৎপাদন বেড়েছে। বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মধুচাষিরা এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ৬০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, জানায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ৬০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বিসিক বগুড়া বেসরকারিভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, গত বছর সাড়ে ১৭ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়। এবার ৩০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। সরিষার জমি থেকে মধু সংগ্রহ করতে জেলায় ১৪২ জন উদ্যোক্তা কাজ করছেন। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহের ফলে ফলনও বাড়ে। বগুড়ায় এবার ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মধু উৎপাদনকারীরা বলছেন, রবি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রতিটি বাক্স থেকে দিনে ৬ থেকে ৭ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। আগাম ও নাবি সরিষা চাষের ফলে প্রায় তিন মাস শুধু সরিষার ফুল থেকে অধিক পরিমাণ মধু সংগ্রহ হয়। সরিষার পর বরই, আম, লিচুর ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করে মৌমাছি। বগুড়া সদর, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম ও গাবতলী উপজেলায় সরিষা খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স ফেলে মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষিরা। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির হাজার হাজার বাক্স সারিবদ্ধ করে রাখা হয়।

নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেরাহার মাঠে মৌচাষি মাহবুবুর রহমান জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। এর ওপরের অংশটা কালো পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো হয়। এরপর বাক্সগুলো মৌমাছিতে ভরে গেলে সরিষা ক্ষেতের আশপাশে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। সেসব বাক্স থেকে সরিষা খেতে ঘুরতে থাকে মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয় বাক্সে। পরে তা সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়। তিনি জানান, ২০০টি বাক্স বসানো হলে প্রতি সপ্তাহে ২০০ লিটার মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌচাষিরা আরও জানান, সরিষা ফুলের মধুর কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। লিচুর মধু ৫০০ এবং কালোজিরার মধু বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়। শীতকালে কালোজিরা, জ্যৈষ্ঠ মাসে তিল ও বাদাম ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। বছরের প্রায় ছয় মাস মধু সংগ্রহ করা গেলেও আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ এই ছয় মাস মৌমাছিকে বিকল্প খাবার দিতে হয়। বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান আরও জানান, মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নানাভাবে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাজারজাতকরণে বিসিক খাঁটি মানের নিশ্চয়তা ও বিভিন্ন মেলায় স্টল বরাদ্দে ব্যবস্থা করে থাকে।

সর্বশেষ খবর