শিরোনাম
শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্রহ্মপুত্রে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু

ভাঙনের হুমকিতে আবাদি জমি ও বসতবাড়ি

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

ব্রহ্মপুত্রে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু

গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এর ফলে এখানকার রাস্তাঘাট, নদীর তীর, আশপাশের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু-একবার ব্যবস্থা নেওয়া হলেও থামছে না এসব বালু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য। প্রশাসনের অভিযানের পর দুই-চার দিন বন্ধ থাকলেও আবার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা শুরু হয়।

ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর, গাইবান্ধা সদরের গোঘাট ও বারবলদিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিন/চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে বালু তুলছেন গাইবান্ধা সদরের মালিবাড়ি ইউনিয়নের সরিষার খামার গ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী। এসব বালু সদরের কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট নতুন বন্দর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গবরাবাড়ি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীর দখল করে স্তূপ করে রাখা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, ওই সিন্ডিকেটে আছে কয়েকজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও। সরেজমিনে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ ও গোঘাট এলাকায় দেখা যায়, ৬/৭টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। নদীতে বিলীন হতে পারে নদীর তীরবর্তী বসত-বাড়িসহ ফসলি জমি। খোলা ট্রাকে বালু পরিবহন ও স্তূপ করে রাখা বালুর কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখে পড়ে এলাকাবাসী। সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর গ্রামের আবদুল খালেক, গাইবান্ধা সদরের সরদার পাড়ার দুলা মিয়া, গোঘাট গ্রামের সাজু মিয়া বলেন, আমাদের অনেকের বাড়িসহ জমি বন্যা ও নদীভাঙনে বিভিন্ন সময় বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার সেগুলো জাগতে শুরু করেছে। তবে বালু উত্তোলনের ফলে চরগুলো ঠিকভাবে জেগে উঠতে পারছে না। আবার স্রোতের গতি বেড়ে নদী ভাঙন, ফসলি জমি নষ্ট ও ওয়াপদা বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে। বাঁধের ওপর দিয়ে বালুবাহী ট্রাক্টর চলাচল করায় পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুন্দরগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর কেল্লাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ড্রেজার মেশিন ও বাল্কহেডের সাহায্যে বালু তোলা হয়। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বালু তুলে তারা স্তূপ করে রাখেন নদীর তীরে। এরপর সটকে পড়েন। তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছে বহুবার অভিযোগ করেছি। দু-একবার ম্যাজিস্ট্রেট বালু ব্যবসায়ীদের ধরে জরিমানা করেছিলেন। কয়েক দিন পর আবার বালু তোলা শুরু করে। স্থানীয়দের বাধা মানে না। উল্টো বালু ব্যবসায়ীদের হুমকিতে এলাকাবাসীই অসহায়। ওই এলাকার রাজু মিয়া বলেন, কিছু বলতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। সেই ভয়ে কেউ কিছু বলে না। খালেক মিয়া বলেন, ট্রাক দিয়ে বালু বহনের কারণে এলাকার রাস্তাঘাট ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ওই এলাকায় বালু তোলার আমি অনুমতি দেইনি। তবে শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম তার এলাকায় বালু উত্তোলন করা হয় স্বীকার করে বলেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন বালু তোলে। এর মধ্যে শাহ জামাল ও তার কয়েক ভাই জড়িত। কয়েকবার তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও তারা বালু তোলে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, বিষয়টি যাচাই করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর