রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৌরি চাষে ভালো ফলনের আশা

দিনাজপুরে মসলা জাতীয় ফসল চাষ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

মৌরি চাষে ভালো ফলনের আশা

দিনাজপুরের বিরলে প্রথমবার চাষ হয়েছে মসলার জগতে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক ঔষধিগুণসম্পন্ন মৌরি। প্রথমবারেই ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি। উৎপাদন খরচ যেমন কম, তেমনি লাভও বেশি। খেত ভরে এখন মৌরি ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য আর ঘ্রাণ বাতাসে ভাসছে। দিনাজপুরের বিরলে প্রথমবার চাষেই ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন এলাকায় ঔষধিগুণসম্পন্ন মৌরি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। কোথায় গুয়ামুড়ি বা কোথাও মহুরি। এর গাছ দুই-তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল দেখতে অনেকটা খোলা ছাতার মতো। সাধারণত ফুলের রং হলুদ আর শাদা হয়। পাতাগুলো চিরল, মসৃণ এবং পাখির পালকের মতো। সরকারের মসলার উন্নতজাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের বিরলের ১০ কৃষক বারি-২ জাতের মৌরি চাষ করছেন। এ এলাকায় ব্যাপক চাহিদা ও ভালো বাজার মূল্যের জন্য মৌরি চাষ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, বীজ মসলা ফসলের মধ্যে জিরা, ধনে, মেথি, মৌরি ইত্যাদির মধ্যে অন্যতম মৌরি একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা ফসল। এটি রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই সফলভাবে চাষ করা যায়, তবে খরিফ মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রবি মৌসুমকে এর চাষের জন্য সর্বোত্তম বিবেচনা করা হয়। কারণ এ মৌসুমে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের প্রকোপ কম থাকে, বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না এবং খরিপের তুলনায় উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। মৌরি পাচক এবং প্রদাহবিরোধী উভয় বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। এ ছাড়া মৌরিতে ব্যথানাশক, প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বাঁধাকপি, ফুলকপির সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবেও মৌরি চাষ করা যায়।

বিরলের ঘাগড়াগাছি গ্রামের কৃষক ললিত চন্দ্র রায় জানান, মসলার জগতে মৌরির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এবারই প্রথম ১০ শতক জমিতে মৌরি চাষ করেছি। এর উৎপাদন খরচ যেমন কম তেমনি লাভও বেশি। আশা করি ফলন ভালো হবে। ভালো ফলন হলে এর চাষ বাড়াব। একই কথা বললেন বিরলের মঙ্গলপুর ইউপির গড়গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান। বিরল উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার শাহজাহান আলী বলেন, বহুগুণে গুণান্বিত এই মসলা। এতে প্রচুর পরিমাণে ঔষধিগুণও বিদ্যমান। বিভিন্ন ধরনের মাছ-মাংসের তরকারি, আচার, পিঠা, নানা ধরনের মিষ্টি খাবারে মৌরি ব্যবহার হয়। পান মসলা হিসেবেও খুব জনপ্রিয়।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, প্রথমবারের মতো কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বিরলের ১০টি ইউনিয়নের ১০ জন কৃষক ১০০ শতক জমিতে এই মৌরি চাষ করছেন। মৌরি চাষে কৃষি বিভাগ সার, কীটনাশক, বীজসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। আশা করি ফলনও ভালো হবে।

তিন মাস মেয়াদের এ ফসলটি বেলে, বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। জমি একটু উঁচু সুনিষ্কাশিত হলে আরও ভালো। মৌরি গাছের পাতা, বীজ, কন্দ, শিকড় কোনো কিছুই ফেলনা নয়। আমাদের দেশে মৌরির ফল বা বীজ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন মসলা জাতীয় এই ফসলের চাষ বাড়ানো গেলে বিদেশ থেকে আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণের দিকে আমরা এগোতে পারব।

সর্বশেষ খবর