রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

জনবল সংকট অরক্ষিত বনাঞ্চল

♦ দখল, চুরি, বনে ঘন ঘন আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে ♦ লোকবলের অভাবে বনজ সম্পদ রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

জনবল সংকট অরক্ষিত বনাঞ্চল

শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবর্দী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা ঘিরে দীর্ঘ বনাঞ্চল রয়েছে। মেঘালয়ঘেঁষা ময়মনসিংহ বনাঞ্চলের অন্তর্গত প্রকৃতির এই অপার দান অরক্ষিত হয়ে পড়েছে জনবল সংকটে। এখানে দখল, চুরি, নেতাদের দাপট, হাতি-মানুষে দ্বন্দ্ব, শব্দদূষণ তো আছেই; তার ওপর সম্প্রতি বনে ঘন ঘন আগুন লাগার ঘটনাও ঘটছে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৩.৯০ বর্গমাইল আয়তনের এ বনাঞ্চল রক্ষায় তিনটি রেঞ্জ অফিসে ১২০ বনকর্মীর পদ আছে। এখানে বনকর্মী আছেন মাত্র ৩৮ জন। তিনজন রেঞ্জার, সাতজন বিট কর্মকর্তা। এর মধ্যে অন্তত ১২ জনের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। বয়স্ক ও এত অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে বিশাল বনাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দুরূহ, বলছে শেরপুর বন বিভাগ। বনের নিরাপত্তা দাবিতে ৩০ এপ্রিল শেরপুরের পরিবেশবাদী যুব সংগঠন ‘গ্রিন ভয়েস’-এর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সুযোগ-সুবিধা ও লোকবল সংকটে বনের নিরাপত্তা নাজুক, বলছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বন বিভাগ সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে ২৮ হাজার ২৫১.৫০ একরের বিশাল বন ভূমি রয়েছে। লোকবল সংকটে অন্তত ৩৩৯১.১৭ একর জমি জবরদখল হয়েছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বনাঞ্চলে দখল চলছেই। গহিন বন থেকে মূল্যবান খনিজ সম্পদ লাল বালু, পাথর ও গাছ উধাও হয়ে যাচ্ছে। এ বনভূমিতে গড়ে উঠছে আবাসিক এলাকা। বনের মধ্যে থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডভুক্ত কিছু জমি কিনে পাশে আরও বনের জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলছে নানা প্রকল্প। শত শত মামলা মোকাবিলা করা প্রতি মাসে বন বিভাগের বড় একটি রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত বড় বনজ সম্পদ রক্ষায় অল্প সংখ্যক বনকর্মীর জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বনে অপরাধের ধরন আধুনিক হয়েছে। কিন্তু তা প্রতিরোধে আধুনিক কোনো ব্যবস্থা হয়নি। বসন্তে গাছ থেকে পাতা ঝরে শুকিয়ে মচমচা হয়ে আছে। অসাবধানে কেউ কেউ ধূমপান শেষে জলন্ত সিগারেটের শেষাংশ শুকনা পাতার ওপর ফেলে দেয়। অনেক সময় দুর্বৃত্তরা বনের জায়গা দখল বা গাছ চুরির লক্ষ্য নিয়ে পাতায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। আগুনে সর্বনাশ হওয়া ঠেকাতে এগিয়ে আসছে সাধারণ মানুষ, ফায়ার সার্ভিস ও বন প্রশাসন। বন বিভাগ বলছে, প্রতিদিনই ছোট ছোট আগুনের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে চরম আতঙ্কে বন বিভাগ। বনে অপরাধ দমাতে লোকবল বাড়াতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে বন বিভাগ। অপরাধ দমনে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য নেই কোনো গাড়ির ব্যবস্থা। অপরাধ ঠেকাতে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা, ছোট-বড়ো টহল গাড়ি অতি প্রয়োজন, দাবি বন বিভাগের।

লোকবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে এ অঞ্চলের বন কর্মকর্তা (এসিএফ) আবু ইউসুফ বলেন, বন বিভাগের লোকজনের জন্য আধুনিক সুবিধা না বাড়ালে বন রক্ষা করা কঠিন।

সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে শুধু বন বিভাগ নয়, নাগরিকদেরও ভূমিকা থাকতে হবে। এই প্রচ খরায় শুকনো বনে আগুন দেওয়ার বিষয়টি বন বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। বনে সরকারি-বেসরকারি সব লোকজনকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর