রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোই একমাত্র ভরসা

♦ সেতুর অভাবে দুর্ভোগে লাখো মানুষ ♦ বিকল্প না থাকায় ঝুঁকি জেনেও পারাপার হতে হয়

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোই একমাত্র ভরসা

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ও কুপতলা ইউনিয়নের মাঝখানে প্রবাহিত ঘাঘট নদ। এ এলাকায় ঘাঘট নদের ওপর সেতু নেই। দীর্ঘদিন দাবি জানিয়েও এখানে সেতু হয়নি। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালে স্বেচ্ছাশ্রমে এ নদের ওপর কাজলঢোপ এলাকায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। দুই ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা সাঁকোটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পারাপার হতে হচ্ছে। এখানে মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া জেলা শহরে বিকল্প পথে ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বল্লমঝাড় ও কুপতলা ইউনিয়নের ১১ গ্রামের লাখো মানুষ। এখানে সেতুটি নির্মাণ করা হলে দুই পাড়ের মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে, সেই সঙ্গে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিও হবে। এলাকাবাসী জানান, ঘাঘট নদের এক পাড়ে বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ছোট নারায়ণপুর, নারায়ণপুর, খোলাবাড়ী, উত্তর নারায়ণপুর ও কাজলঢোপ গ্রাম। অন্য পাড়ে কুপতলা ইউনিয়নের দুর্গাপুর, পশ্চিম দুর্গাপুর, চাপাদহ, পশ্চিম কুপতলা, ধর্মপুর ও বেড়াডাঙ্গা গ্রাম। দুই ইউনিয়নের লোকজন ঘাঘট নদের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। টাকা, বাঁশ, কাঠ, রশি দিয়ে সহায়তা করে। এতে খরচ হয় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা। এরপর সাঁকোটি আর মেরামত করা হয়নি। সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বাঁশের খুঁটির নিচের অংশ পানিতে নষ্ট হয়েছে। অনেক স্থানে পাটাতনের বাঁশ খুলে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকজন একসঙ্গে উঠলেই সাঁকোটি দোল খাচ্ছে। কেউ মালামাল মাথায় নিয়ে, বাইসাইকেল, কেউবা মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে সাঁকো দিয়ে নদী পার হচ্ছেন। অনেকে হেঁটে পারাপার হতেও ভয় পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ না থাকা রাতে পারাপার আরও ঝুঁকিপূর্ণ। উভয় পাশে কাঁচা সড়ক। অটোরিকশা-ভ্যান পারাপারের সুযোগ নেই। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে নদ পারাপার হয়।

পশ্চিম দুর্গাপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক হায়দার আলী (৫০) বলেন, বর্ষায় নৌকা, শুকনায় বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হতে হয়। সাঁকো দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে পারাপার হওয়া যায় না। চাপাদহ এলাকা হয়ে ৪ কিলোমিটার ঘুরে শহরে যেতে হচ্ছে। এতে সময় অপচয় হচ্ছে। এখন সাঁকোটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হায়দার আলীর মতো অটোরিকশা চালক সুজন মিয়া, রবিউল ও আবদুর রশিদ জানান সাঁকো দিয়ে পারাপারের দুর্ভোগের কথা। শিক্ষার্থী শারমিন আকতার বলেন, শহরে যেতে এ রাস্তাটাই একমাত্র শর্টকাট। সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পারাপার হতে হচ্ছে। পশ্চিম দুর্গাপুর গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, বন্যার সময় নৌকা ওইপাড়ে গেলে তা ফিরে আসতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে, ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। বল্লমঝাড় ইউপি চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান ও কুপতলা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় এলজিইডিকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে, কোনো কাজ হচ্ছে না। গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. বাবলু মিয়া বলেন, কাজলঢোপ এলাকায় ঘাঘট নদের ওপর সেতু নির্মাণের একটি প্রস্তাবনা সদর দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর