রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

পানির জন্য হাহাকার

♦ গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প বন্ধ ♦ নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না ♦ পদ্মা-গড়াইয়ে পানিপ্রবাহ কম

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

পানির জন্য হাহাকার

টানা তাপপ্রবাহ, পদ্মা-গড়াইয়ে পানিপ্রবাহ কম, দেশের সর্ববৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প বন্ধ। ভূ-উপরিভাগে সেচের পানি না পাওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ দিয়েও পানি উঠছে না। গাছপালা মরণাপন্ন হয়ে পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সব মিলিয়ে পানির জন্য হাহাকার চলছে এ অঞ্চলে। মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষর হওয়া গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি মোতাবেক ১০ দিন অন্তর কিছু পানি পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সময়ে পদ্মায় পানিপ্রবাহ একেবারে নিচে নেমে যাচ্ছে। এপ্রিল-মে মাসে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গড় পানিপ্রবাহ মাত্র ৪ মিটার আর এল-এর (রিডিউসড লেভেল) কাছাকাছি পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের হিসাব মোতাবেক এবার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ২৬ হাজার কিউসেকের কাছে নেমে আসে। যৌথ নদী কমিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক, মার্চ ও এপ্রিলে পানি পাওয়া গেছে ৩৪ হাজার থেকে ৩৫ হাজার কিউসেকের মতো।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, পদ্মায় পানিপ্রবাহ কম থাকায় এবার বোরো মৌসুমের শুরুতে পাম্প গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। এ মৌসুমে এক ফোঁটাও পানি পায়নি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার কৃষকরা। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত এই পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিনটি পাম্পের একটি ভালো ছিল। কিন্তু পদ্মায় পানিপ্রবাহ কম থাকায় পরবর্তীতে সেটি চালানোর ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদী থেকে চ্যানেলের মাধ্যমে পানি এনে পাম্প করে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার কৃষকদের জন্য সরবরাহ করা হয় এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

গঙ্গা বেসিন বেইজড পিপল নেটওয়ার্কের কো-অর্ডিনেটর পরিবেশবাদী খলিলুর রহমান মজু বলেন, গঙ্গা থেকে পদ্মা হয়ে কুষ্টিয়ার গড়াইয়ে পানি আসছে খুবই কম। কুষ্টিয়া শহরেই আমি এবং আমার প্রতিবেশীরা নলকূপ থেকে পানি পাচ্ছি না। তাপমাত্রা ৪০/৪২ ডিগ্রিতে উঠেছে। এসবই মরুকরণের লক্ষণ। খলিলুর আরও বলেন, গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প শুধু এ অঞ্চলে কৃষকদের সেচই দেয় না, চার জেলায় খালের মাধ্যমে শিরা উপশিরার মতো পানিপ্রবাহের জাল সৃষ্টি করে। এ কারণে এ অঞ্চলে মরুকরণ বিলম্বিত হয়। কৃষকের সেচের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে প্রকল্পটি। এদিকে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলাগুলোয় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষকরা পানি পেতে সেচপাম্প গর্ত খুঁড়ে ভূগর্ভে নামিয়ে নিচ্ছে। কুষ্টিয়া সদরের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, এভাবে চলতে থাকলে চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে যাবে। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পে পানি না দেওয়ায় এবার জেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ কম হয়েছে। টানা গরম পড়ায় সেচ দিয়ে কুলাতে না পারায় অনেক কৃষকের ধানে চিটা হয়ে গেছে। পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করীম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এবার তো ভয়াবহ অবস্থা। বৃষ্টি নেই, নদীতে পানি নেই, ভূগর্ভেও পানি নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর