রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধানি জমিতে পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

ধানি জমিতে পুকুর খনন

রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে গ্রামে মাছ চাষের ‘সফলতার’ গল্প শুনিয়ে অবাধে চলছে পুকুর খনন। ক্ষমতাবান থেকে শুরু করে মাছচাষি, অনেকেই পুকুর কেটেছেন। একসময়ের ধানি জমিতে এসব পুকুর কাটা হয়েছে। এক যুগে মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা ও পুঠিয়া উপজেলার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে। পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের শক্তিপাড়া বিলে ৭০ শতাংশ জমি ছিল রাজশাহী মহানগর কমিউনিস্ট পার্টির সহসম্পাদক অজিত কুমার মন্ডলের। ওই বিলে আগেই পাঁচটি পুকুর কাটা হয়। আশপাশে পুকুর হওয়ায় নিজের জমিতেও তিনি পুকুর কেটেছেন। তিনি বলেন, বিলে খুব অল্প জমি বাকি আছে। সেটুকুও যে কোনো সময় পুকুর হয়ে যাবে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খনন করছেন তা নয়, আশপাশে পুকুর হলে পাশের জমিতে ভালো ফসল হয় না। এ জন্য লাভের আশায় অনেকে পুকুর কাটছেন। মোহনপুর উপজেলার মেইল বিলের পশ্চিম-দক্ষিণে বড় বড় তিনটি পুকুর। এর মধ্যে দুটি পুকুর স্থানীয় সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিনের। অন্যটি তার ভাইয়ের। এলাকাবাসী জানান, বছর পাঁচেক আগে সেখানে ধানি জমি ছিল। সেই ধানি জমির আড়াই শ বিঘা জমিতে রাতারাতি পুকুর খনন করা হয়। পুকুর কাটায় শতাধিক কৃষকের আপত্তি সত্তেও পুকুরগুলো কাটা হয়েছে। সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, বিলের ওই জায়গায় পানি থাকত। ধান হতো না। তিনি কৃষকদের থেকে ১০ বছরের জন্য জমি ইজারা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই জায়গায় আগে কিছুই ছিল না। এখন অন্তত সেখানে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। কিছু মানুষ দোকান বসিয়ে বেচাকেনাও করছে। পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামে একটি খাল দিয়ে আত্রাই নদের পানি আসত। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় খাল শুকিয়ে গেছে। ওই এলাকায় অন্তত ২৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরগুলোতে পানি থাকছে না। বাধ্য হয়ে সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে প্রায় প্রতিটি পুকুরে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানিও উঠছে না। মাছচাষি স্বপন কুমার বছরে ৩৫ হাজার টাকায় জমি ইজারা নিয়ে কয়েকটি পুকুর কেটেছেন। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে তার একটি পুকুরে মেশিনে পানি উঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। পানি না থাকলে পুকুর অকেজো হয়ে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, অনেক অকেজো প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু পুকুর রক্ষায় কোনো প্রকল্প হচ্ছে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও আরডিএ শহরের দেড় শতাধিক পুকুর মালিকের কাছ থেকে কিনে নিতে পারেন। এ জন্য একটা মহাপরিকল্পনা দরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, একদিকে শহরে জলাশয় কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামে পুকুর খনন করে মাছচাষ চলছে। সেই পানিতে মাছের খাবার দেওয়ায় সেটি আবার ব্যবহার করা যাচ্ছে না। উল্টো খামারিরা দিনরাত ভূগর্ভস্থ পানি তুলে পুকুরে দিচ্ছেন। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রতি বছর সাধারণত ১ ফুট করে স্তর নেমে যায়। গত বছর হঠাৎ ২ ফুট নেমে গেছে। এবার বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে পানির স্তর আরও নেমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর