শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

অবাধে বিক্রি নিষিদ্ধ বালাইনাশক

হুমকিতে প্রাণপ্রকৃতি পরিবেশ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

অবাধে বিক্রি নিষিদ্ধ বালাইনাশক

সরকার নিষিদ্ধ বালাইনাশক কার্বোফুরান অবাধে বিক্রি হচ্ছে পঞ্চগড়ের হাটবাজারে। সার-কীটনাশকের দোকানগুলো থেকে কম দামে এসব বালাইনাশক কিনছেন কৃষক। প্রয়োগ করছেন জমিতে। ফলে প্রাণপ্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এসব বালাইনাশক দেশের বৃহৎ কীটনাশক উৎপাদন ও আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর প্যাকেটজাত করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার নিষিদ্ধ করার পরপরই কার্বোফুরান ৫জি উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ করে দেয় কোম্পানিগুলো। কিছু অসাধু ডিলার ও দোকানদার মজুদ করা এ বালাইনাশকের প্যাকেট বিক্রি করছেন। অনেকে নকলও করছেন। তবে কার্বোফুরান নিষিদ্ধের বিষয়টি অধিকাংশ কৃষকই জানেন না। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত ধান, গম, ভুট্টা, বাদাম, শাকসবজি খেতের পোকামাকড় দমনে কার্বোফুরান ব্যবহার করা হয়। কার্বোফুরান দানাদার কীটনাশক। কীটতত্ত্ববিদ ও পরিবেশবিদদের মতে কার্বোফুরানের ব্যবহারে পরিবেশ ও মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হয়। জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে হৃদরোগ ও স্ট্রোক বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়া। কার্বোফুরান ব্যবহারের ফলে ৩০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত ফসলে বিষক্রিয়া থাকে। কার্বোফুরান ভেজা জমিতে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে তা উদ্ভিদের শেকড় দিয়ে পাতা, ডাল ও শস্যে প্রবেশ করে। জমিতে কার্বোফুরান ব্যবহারের ফলে উপকারী পোকামাকড়, মাছ, পাখিসহ নানা ধরনের প্রাণী মারা যায়। এটি খাদ্য ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। প্রাথমিকভাবে বমি হয় ও ত্বকের ক্ষতি করে। দীর্ঘমেয়াদে মানুষের কিডনি, ফুসফুস থেকে শুরু করে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে জমিতে কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করে জাতিসংঘ। এরপর ৮৭ দেশ এ আহ্বানে সাড়া দেয়। ২০২২ সালে ৮৮তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ আহ্বানে সাড়া দেয়। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে কার্বোফুরান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। বাংলাদেশে ২৫২ কোম্পানি কার্বোফুরান আমদানি, বিক্রি ও প্রক্রিয়াজাত করত। সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও এসব কোম্পানির কার্বোফুরানে এখনো পঞ্চগড়ের বাজার সয়লাব। পঞ্চগড়ের সদর, দেবীগঞ্জ, আটোয়ারী, বোদা ও তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সার ও কীটনাশকের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ কার্বোফুরান। নতুন চাকলাহাটের সার-কীটনাশকের দোকান শাহীন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহীন হোসেন বলেন, ‘এসিআইসির পঞ্চগড়ের ডিলার রাসেলের কাছ থেকে ব্রিফার ৫জি কার্বোফুরান কিনেছি। নিষিদ্ধ যে এটা জানি। কীটনাশক ডিলার ও মেসার্স রাসেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাসেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এসব নিষিদ্ধ কীটনাশক নেই। গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ীরা কোথায় পাচ্ছেন তা বলতে পারব না। আমরা কার্বোফুরান সরবরাহ করছি না।’ এসিআইসির টেরিটরি অফিসার মঈন ইকবাল বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই কার্বোফুরান বন্ধ করেছি। তার পরও অনেকে বিক্রি করছে শুনেছি। এগুলো নকলও হতে পারে।’ চাষিদের অভিযোগ, এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের কোনো উদ্যোগ নেই। উদ্যোগ নেই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ভোক্তা অধিকার ও প্রশাসনের। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) বাসুদেব রায় বলেন, ‘আমরা চাষি ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ খবর