বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

কালভার্টের মুখ ভরাটে জলাবদ্ধতা

চাষাবাদ ব্যাহত শতাধিক বিঘা জমিতে, পানিবন্দি অনেক পরিবার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

কালভার্টের মুখ ভরাটে জলাবদ্ধতা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় চার লেন মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় শতাধিক বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চাষাবাদ করতে না পারায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার দুই ভাই সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে এ কালভার্টের মুখ ভরাট করেছেন। সম্প্রতি ভুক্তভোগী চাষিরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।  অভিযোগ ও সরেজমিন জানা যায়, মহাসড়কের উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাঁচলিয়া বাজারের পশ্চিমে আগে থেকেই পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট ছিল। সম্প্রতি রংপুর-এলেঙ্গা চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের আওতায় সেখানে বড় কালভার্ট স্থাপন করা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই কালভার্টটির দক্ষিণে মাটি ভরাট করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তার দুই ভাই। কালভার্টের দক্ষিণ পাশের সওজের বড় একটি জলাধার মাটি দিয়ে ভরাট করে দখল করে নেন তারা। ফলে পাঁচলিয়া, হাসানপুর, রানীনগর ও ধোপাকান্দি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মহাসড়কের উত্তর পাশের ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শতাধিক বিঘা জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। অন্তত ১০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাঁচলিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী জামাল উদ্দিন, আবদুর রশিদ, গোলাম মোস্তফা, নূর মোহাম্মদ ও আবদুল মালেক জানান, আমরা ৫০-৬০ বছর ধরে এ অঞ্চলে চাষাবাদ করছি। এবার খেতে পানি জমে যাওয়ায় আবাদ করতে পারছি না। কালভার্টের মুখ বন্ধ করায় রাস্তার উত্তর পাশের পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। ফলে চার গ্রামের ১০০ বিঘারও বেশি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের জাহাঙ্গীর, ওয়াসিম, ইয়ার আলী ও আবদুল্লাসহ অন্তত ১০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহেল কাফির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তার ভাই আল-আমিন জানান, কালভার্টের দক্ষিণে আমাদের এক শ ডেসিমাল জমি রয়েছে। আমাদের জমির সামনে সওজের কিছু জায়গা রয়েছে। সামনে সওজের জায়গা লিজের জন্য আবেদন করে সেখানে মাটি ভরাট করেছি। এতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সরকার যদি চায় তবে আমাদের জমি লিজ নিয়ে কালভার্টের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। আমাদের জমি আমরা ভরাট করেছি, তাতে কার কী হলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আবু সাদ নিলয় জানান, কালভার্টের মুখটা বন্ধ করার পর তাকে বারবার বলা সত্ত্বেও খুলে দেননি। আমরা এস্কেভেটর দিয়ে মুখ কিছছুটা খুলে দিলেও পরে আবারও বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইদের বারবার বলার পরও তারা কর্ণপাত করছেন না। এই মুহূর্তে হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ মাঠে না থাকায় পদক্ষেপ নিতে পারছি না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল জানান, আমরা কোনো জায়গা এখন লিজ দিচ্ছি না। যদি সে জলাধার বন্ধ করে তার বিরুদ্ধে জলাধার আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃষি অফিসার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর