শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

সব হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন

তিন উপজেলায় নদীভাঙন- আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় ক্ষোভ বরাদ্দের অভাবে কিছু করা যাচ্ছে না বলছে প্রশাসন

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

সব হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন

শেষ সম্বল রক্ষার চেষ্টায় ভাঙনকবলিতরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুড়িগ্রামের উলিপুর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে নদীভাঙনের শিকার অনেক পরিবার চরম অসহায় দিনাতিপাত করছে। তারা কোনো আর্থিক সহায়তা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা দেওয়া হলেও সবার হাতে তা না পৌঁছায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। বরাদ্দ না থাকায় এসব অসহায় পরিবার সহায়তাবঞ্চিত হচ্ছে বলছে উপজেলা প্রশাসন। জানা গেছে, দুই দফা বন্যায় এবং বন্যা-পরবর্তী জেলার উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের হকের চরে ৪৫৮টি পরিবার এবং ফুলবাড়ী উপজেলায় অর্ধশতাধিক পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়। এসব পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়কমন্ডপে ৩০টি এবং বড়ভিটা ইউনিয়নের মেকলীতে ২২টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এ উপজেলার চর গোড়কমন্ডপে এখনো ভাঙনের মুখে রয়েছে সাতটি পরিবার। ধরলা নদীর তীরবর্তী মৃত ছামাদ মিয়ার বিধবা স্ত্রী আছিয়া বেওয়া (৫২) আক্ষেপ করে বলেন, হামার সবই চইলা গ্যাছে। এক রাতে সাতটি বাড়ি নদীত লইয়া গেছে। আমরা নদীর কাচারে পইড়া আছি। কোন জায়গায় যাবো, যাওয়ার কোনো স্থান নাই। সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না করে আমাগো নদীত ডুববাই মরতে হইবো। এই গ্রামের মৃত শমশের আলীর ছেলে কৃষক আয়েজ উদ্দিন (৪৫) জানান, ভাঙনে অনেক জমি লইয়া গেছে। ১৫/২০টা বাড়ি সরাইছে। সরকার বাঁধ না দিলে পাশেই ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা মুজিব কেল্লাটিও ভাইঙা যাইব। একই এলাকার মৃত কবেজ আলীর ছেলে আবদুর রহমান জানান, হঠাৎ তীব্র নদীভাঙনে লোকজন দিশাহারা হয়ে পড়েছে। আমার চোখের সামনে আয়নাল, আমির হোসেন, আফান উদ্দিন, ফয়জাল, বসির, আবু তাহের ও আয়েশার বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেল। এরা গরিব মানুষ। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয় নাই। আমরা এখানে বাঁধ চাই। সরেজমিনে জানা যায়, ভাঙনকবলিতদের কষ্ট বেড়েছে জেলায়। তারা এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই টাকার অভাবে বিভিন্ন মানুষের জমিতে ভেঙে যাওয়া বাড়ি ফেলে রেখেছে। কোথায় যাবে তার নেই কোনো ঠিকানা। যারা বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন তারা ঋণ করে জায়গা কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করছেন। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহনুমা তারান্নুম জানান, ভাঙনকবলিতদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। গত এক বছর ধরে কোনো বরাদ্দ পাইনি। ফলে ভাঙনকবলিতদের জন্য কিছুই করার নেই। শুধু চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে শুকনো খাবার ও ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছি। জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা আবদুল হাই জানান, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আবেদন পেলে এক থেকে দুই বান টিন সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে আমাদের কাছে কোনো বরাদ্দ নেই। নতুন বরাদ্দ পাওয়া গেলে পরে তাদের সহযোগিতা করা যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর