ঝিনাইদহে আইএইচটির শতাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শত শত শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে গঠিত হয় তদন্ত টিম। মঙ্গলবার ৫ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইএইচটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. রেজিনা আহম্মেদ। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসসহ তার তিন সহযোগী পালিয়ে গেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আলোচনা-সমালোনা ও তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাস দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনসহ অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ডেন্টাল ছাত্রীদের শহরের ব্যাপারীপাড়াস্থ তার চেম্বারে ডেকে এনে হাতে কলমে প্রশিক্ষণের নামে যৌন নির্যাতন চালাতেন। যৌন কর্মে লিপ্ত না হলে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল ও লিখিত পরীক্ষায় কম মার্কস দেওয়ার কথা বলে একাধিক ছাত্রীর সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো। তদন্ত টিম যৌন নির্যাতনের শিকার এমন শতাধিক নারী শিক্ষার্থীর বক্তব্য ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত টিম। তাছাড়া কার্তিক গোপাল ক্লাসে নারী শিক্ষার্থীদের পর্দা করার বিষয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মানহানিকর বক্তব্য দিতেন। তিনি রাসুল সাঃ-কে নিয়ে প্রায়ই ক্লাসে কটূক্তি করতেন।
নারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কার্ত্তিকের এই অপকর্মে সহায়তা করতেন, আইএইচটির রেডিওগ্রাফার আলমডাঙ্গা উপজেলার সরফরাজ খাঁন সোহাগ। সোহাগ আইএইচটির ক্যাম্পাসে মাদকের স্বর্গ রাজ্য গড়ে তোলে। এতে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। এদিকে গেস্ট লেকচারারের কোন পদ না থাকার পরও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চাকলাপাড়ার তারিক মোড়ের মাহমুদুল ইসলাম লিওন ক্লাস নেওয়ার নামে নারী শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব দিতো। আউট সোর্সিংয়ে কর্মরত ঝিনাইদহ শহরের হামদহ দাস পাড়ার সুর্য্য দাস লিওনের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। ভারতের নাগরিক হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ধরে তিনি নানা অপকর্ম করে পার পেয়ে গেছেন। বর্তমান তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে আইএইচটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. রেজিনা আহম্মেদ জানান, ছাত্রদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সব ঘটনা তদন্ত এবং প্রায় সব অভিযোগই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। যৌন নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজও হাতে পেয়েছি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ আইএইচটিতে ৫টি ডিপার্টমেন্টে বর্তমানে ৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ১২ বছরে শিক্ষাজীবন শেষ করে ৭টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। ২০১২ সালে মাত্র ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।
বিডি প্রতিদিন/এএ