শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্গা, দিদি আর আমি

রণজিৎ সরকার

দুর্গা, দিদি আর আমি

দুর্গাপূজার দিন চলে এসেছে। দিদিকে আজ কথাটা বলতেই হবে। দিদি চুপচাপ বসে আছেন। আমি দিদির সামনে গিয়ে। দিদিকে বললাম, ‘দিদি, গত পূজাতে নতুন জামা কিনে দেওনি। এবারও কি কিনে দেবে না?’

দিদি কিছু বলেন না। চুপ করে থাকেন।

‘ও দিদি, কথা বলছ না কেন, উত্তর দাও? নতুন জামা কিনে দেবে কি না।’

তবু দিদি আর কথা বলে না। দিদি আমার দুর্গাদেবীর মতো চুপ করে আছেন।

‘দিদি, তালুকদার বাড়ির গৌতম, দক্ষিণপাড়ার তাপস, মধ্যপাড়া নয়ন আর পাশে বাড়ির গণেশ নতুন জামা, প্যান্ট কিনেছ। আমাকে কবে কিনে দেবে না দিদি, বল? দিন তো আর নেই দিদি। একদিন পর ষষ্ঠী শুরু হবে। ও দিদি, আমি শুধু আমারটার কথা ভাবছি, তোমারও তো পূজা উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় প্রয়োজন তাই না দিদি? তোমার কাছে দাবি করতে পারছি, কিন্তু তুমি কার কাছে দাবি করবে দিদি? আমাদের তো বাবা-মা নেই, কার কাছে করব দাবি? দিদি মামার বাড়ির কেউ আমার আর তোমার খোঁজখবর রাখে না। কোথায় থাকি, কি খাই কীভাবে চলি আমরা কেউ রাখে না খবর। আচ্ছা দিদি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো তিথি উপলক্ষে মামারবাড়ি থেকে একটা সুতারবস্তু পেলাম না। আসলে কি ভাগ্য খারাপ? হয় তো সত্যি সত্যি ভাগ্য খারাপ আমাদের। সেজন্যই তো আজ আমাদের এই অবস্থা।’

দিদি কথাগুলো শোনার পর আমার হাত ধরে বসলেন। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

দিদির আদর পেয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নতুন জামা-কাপড় কেনার কথা ভুলে গেলাম।

‘দিদি, তোমাকে অনেক কথা বলে ফেলেছি তাই না। তুমি তো রাগ করনি তো। কেন যে আমাদের মতো মানুষের জীবনে এত উৎসব আসে। উৎসব আর তিথি আসলেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়।’

দিদি আবার আমার গালে হাত দিয়ে আদর করতে লাগলেন। দিদির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম। দিদির চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝড়ে পড়ছে।

দিদির চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম,           ‘দিদি তুমি কাঁদছে কেন? কেঁদ না। আমারও যে কান্না পাচ্ছে।’

দিদি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও দিদিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম।

‘কি রে রজত, ভাইবোন মিলে কান্না করচ্ছি কেন?’

তাকিয়ে দেখি, পাশের বাড়ির সুবল কাকা। কিছু বললাম না। কি বলব কাকাকে বলে কোনো লাভ নেই। কাকা আবারও বললেন, ‘রজত, কি হয়েছে, বল?’

হাত দিয়ে আমার চোখের জল মুছতে মুছতে মিথ্যা করে বললাম, ‘কাকা দিদির অসুখ একটু বেড়েছে। দিদিকে নিয়ে চিন্তায় আছি।’

সুবল কাকা বললেন, ‘তোর দিদি তো জন্মগত ভাবেই বোবা আবার চোখেও কম দেখে। সে তো কখনো ভালো হবে না। এখন সে দুর্গাদেবীর মতো একটা মূতি তোর দিদি। ঘরে বসে বসে পূজা দিস।’

কাকার উপর বিরক্ত হয়ে রেগে বললাম, ‘চুপ করেন কাকা। আর বেশি কথা বলবেন না। চলে যান।’

দিদি আমার মুখ চেপে ধরলেন। আর কথা বলতে পারলাম না। সুবল কাকা তবু কি যেন বলতে বলতে চলে গেলেন।

‘দিদি আমি বড় হয়ে তোমাকে চিকিৎসা করাব। তুমি অবশ্যই ভালো হবে। কয়েক বছর পরে আমাদের বাড়িতে দুর্গাপূজা করব।’

দিদি আমার মাথা নাড়াল। দিদির হাত ধরে মন্দিরে নিয়ে এলাম। মা দুর্গার কাছে দুহাত তুলে দিদির জন্য প্রার্থনা শুরু করলাম আমি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর