শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দিপু দাদার গোয়েন্দাগিরি

শেখ আহ্সান আকিব

দিপু দাদার গোয়েন্দাগিরি

চমৎকার সকাল। আজ হয়তো শান্তিতে বসে সময়টা কাটানো যাবে। বারান্দায় বসে পূর্বের আকাশটা দেখছি। অপূর্ব দৃশ্য কিন্তু সূর্যটা আজ অর্ধবৃত্তের মতো লাল রাঙা হয়ে উঠছে। কেবল চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি আর পত্রিকার যুক্ত কলামে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে দিপু ভাই। আমি লামি চাঁন, দিপু দাদার সঙ্গে একসঙ্গেই থাকি। কীসব রাজনৈতিক আলাপ কলামজুড়ে! মানুষের সমস্যায় কারও নজর নেই। দিপু দাদা বলল, তুই আবার কবে থেকে জনগণের সমস্যা আর রাজনীতিতে আগ্রহ দেখাচ্ছিস। না না! আগ্রহ না দিপু ভাই। দ্রব্যের বাজারে ঊর্ধ্বগতি। কালই তো নিমাই দাদার দোকান থেকে পাউরুটি নিয়ে এলাম। আগে যেটা ছিল ২০, এখন সেটা ৩৫। দিপু দাদা নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল। বাইরে গিয়েছিল বোধ হয়। হঠাৎ ঘরে ঢুকে বলল, গতকাল রাতে শামসুর ভাইয়ের ছেলে আনারউদ্দীন মারা গেছে। ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’। বললাম কী করে? তিনি জানাল, খুন হয়েছে। দিপু ভাইয়ের ভিতরে শখের গোয়েন্দার একটা ব্যাপার ছিল। তাই এই ডিটেক্টিভ পোকাটাও নড়ে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। দিপু ভাই বলল, চল একবার ঘুরে আসি। রীতিমতো যেতে যেতে দেখলাম পুলিশের গাড়ি, হরেক রকমের জেরা চলছে শোকাহত পরিবারকে। দিপু দাদা দেখলাম থানার বড় সাহেবকে চেনে। বলল, চল শোকাহত পরিবারকে জ্বালিয়ে লাভ নেই। কাল আসা যাবে। চল, জানাজার নামাজ পড়ে আসি। কাল ৮টায় শোকাহত বাড়ি গেল দিপু ভাই। সেখানে গিয়ে কাকা-কাকিকে সালাম করে বলল, আমি আনারের ঘরটা দেখতে চাই। কাকা নিয়ে গেল তার ঘরে। দিপু দাদা তদন্ত করছে। আমি বললাম, পুলিশ যদি ঝামেলা করে তাহলে কী করবে? না না পুলিশ ঝামেলা করবে না। কারণ কাজে বেগ পেলে তারা আরও খুশি হবে। তা ছাড়া তো বড় সাহেব আমাকে চেনে। কত সাহায্য করেছি ওনাকে! বললাম, তাই নাকি। দেখলাম, তার মুখে বিরক্তির ছাপ। কথা না বলাই ভালো। ফোর টাইমস টেইলস বই থেকে একটা চিঠি বের করল। দাদাকে অনেকটা ফেলুদার মতোই লাগছে। দাদা পুরোপুরি সার্থক না হলেও কিঞ্চিত সফল। চিঠির খামে দিনাজপুর সদর ঘরের পোস্টমার্ক রয়েছে। খামে লেখা আছে, ‘আনার যে কাজটা দিয়েছিলাম সম্পূর্ণ শেষ করবে। না হলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এখনো কিন্তু সময় আছে। ভাবিয়া করিও কাজ।’ আমি যখন জানতে ব্যস্ত চিঠিতে কী আছে! তখন দিপু দাদা প্রেরকের ঠিকানা খোঁজ করছে। প্রেরকের যে নামটা লেখা আছে, সেটা ১০০ গজ দূরে থেকেও যে কেউ বলে দিতে পারবে যে, নামটা ভুল। যাই হোক, আরও তদন্ত চালাল দিপু দাদা। আনারের ঘরে বেশ কিছু মেডিকেল সায়েন্সের বই দেখে দিপু দাদা বলল, আনার ছিল কমার্সের ছাত্র। সায়েন্সের বই নিয়ে কি করবে! এবার দিপু দাদা চিঠি ও বই দুটি ব্যাগে নিয়ে বলল, এবার আসি তাহলে। যেতে যেতে দিপু দাদা একটা প্রশ্ন করল, কাকা বাবু-আনারের কোনো বন্ধু ছিল? হ্যাঁ, অনেকেই তো ছিল। কাকা বাবু আপনি কি মহসিন পটিয়াকে চেনেন? না, বাবা এরকম নামে তো ওর কোনো বন্ধু ছিল না! আচ্ছা কাকা, চলি তাহলে। প্রয়োজনে আবার আসব। দিপু দাদা বলল, চল চাঁন আজমির সাহেবের হোটেলের রুই মাছ ভুনা ও পোলার চালের খিচুড়ি খাব। কবে খেয়েছি মনেই নেই। খেতে খেতে ফেলুদা চিঠির ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত করল। আমাকে বলল, কিছু বুঝলি? হ্যাঁ, এটা একটা বাজে চিঠি। বাজে চিঠি নয়, উড়ো চিঠি। তাও আবার হুমকি সহকারে বেশ রহস্যময়। রাত হয়েছে শীত বাড়ছে বেশ। চল উঠে বাড়ি ফেরা যাক। কালকে যাব পোস্ট অফিস ও বড় সাহেবের কাছে। চল, চল শিগগিরই চল।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর