শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কাক করেছে সর্বনাশ

আশতাব হোসেন

কাক করেছে সর্বনাশ

ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দরের পাশে এক বন ছিল। বনটি বিভিন্ন গাছপালায় ভরা। বনটির কিছু অংশ ভারতের গোলোগঞ্জ থানায় এবং সোনাহাটের কিছু অংশ দখল করে গড়ে উঠেছিল, যেটা এখন স্থলবন্দর। আগের দিনে বুড়া-বুড়িরা বলত সেই বনে অনেক বাঘ, হাতি, শিয়াল, ভাল্লুকসহ অনেক প্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। বনটির গাছে গাছে নানা প্রজাতির পাখির কলরবে সকাল-সন্ধ্যা মুখরিত ছিল। শকুন, কাক, বক ভিন্ন গাছে বাসা বেঁধে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটাত। সেই বনের পশ্চিম পাশে একটি বড় বটগাছ ছিল। গাছটির মগডালে এক কাক দম্পতি বাসা করে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে ছিল। একদিন সকালে এক জোড়া হাতি গাছের পাতা খেতে খেতে বটগাছটির নিচে চলে এসে কিছু সময় বিশ্রাম নিচ্ছিল। এমন সময় পুরুষ কাকটি মনে করে তাদের বাচ্চা ধরতে গাছের নিচে হাতি বসে আছে। এই ভেবে কাকটি বাসায় গিয়ে স্ত্রী কাকটিকে ঘটনার বর্ণনা দেয়। স্ত্রী কাকটি বাসা থেকে বের হয়ে এসে দেখে বলে তাইতো ওদের তো বদ মতলব আছে। ওরা তো আমাদের আদরের ছানা ধরতেই বসে আছে। তখন পুরুষ কাকটি বলে, এখন কী করা যায়? কী করে হাতি দুটিকে তাড়ানো যায়? স্ত্রী কাকটি বলে, মাথায় একটি বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। পুরুষ কাকটি বলে কী বুদ্ধি? ঝটপট বলে ফেল। তা না হলে ভারী মুশকিল হয়ে যাবে। তখন স্ত্রী কাক পুরুষটির কানে কানে কী যেন বলে দিল অমনি পুরুষ কাকটি হাতি যেখানে শুয়ে আছে, সেই সোজা ওপরের এক ডালে বসে পুচ্চুত করে হেগে দেয় হাতির মাথায়! হাতি শোয়া থেকে রেগে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে কেরে এমন কুকর্ম করলি? এমন সময় স্ত্রী কাকটিও অন্য হাতির মাথার ওপরেও পিচ্চিত করে ছেড়ে দেয়! কাকের এমন অমার্জিত অপরাধের কি সাজা হতে পারে, হাতি দুটি সেই চিন্তা শেষে বট গাছটি ভেঙে ফেলতে ধাক্কাতে শুরু করে। কিন্তু বটগাছের শিকড় তো একদিকে নয় নানা দিকে ছড়িয়ে মাটির নিচে চলে গেছে। হাতি দুটি বট গাছটি ভাঙতে না পেরে, বনের ছোট ছোট যত গাছ আছে, একে একে সব ভাঙা শুরু করে দেয়। কাক দুটিতো ভয়ে গাছে ওপরে বসে কা কা, ক্যা ক্যা, শুরু করে। এদিকে হাতির বন উজাড় করার কথা ছড়িয়ে পড়ে। তখন বনের যত হাতি আছে সবাই এসে এই এলাহি কাণ্ড দেখে বলে কিরে কি হয়েছে তোদের এমন করে বন উজাড় করলে তো সবার জন্য সমস্যা হবে। ঘটনা খুলে বলোতো! তখন যে হাতিটির মাথায় কাক আগে হাগু করেছে সেটা বলে যে, আমার মাথায় ওই কাকটা বমি করেছে, আর স্ত্রী হাতিটি বলে আরে না না একেবারে হাগু ছেড়েছে ওপর থেকে! এক হাতি বলে বমি আর একটি বলে হাগু এই বলে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক লাগিয়ে শেষে মারামারি শুরু হয়ে যায়! যে সব হাতি তাদের অবস্থা জানার জন্য এসেছিল তারা বলে এবার মনে হয় বনটির রক্ষা হলো।

ওরা দুজন গাছপালা ভাঙা ক্ষান্ত দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে শরীরের শক্তি ক্ষয় করছে। একটু পরেই সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবেনে। এই বলে যার যার গন্তব্য সে সে চলে যায়।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর