শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
গল্প

ঈদ ও মুক্তির আনন্দ

সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্

ঈদ ও মুক্তির আনন্দ

এবারের ঈদে আমার দুটি আনন্দের খবর আছে। এক. ঈদ; দুই. মুক্তি।

মনের আনন্দে দুটি পাখি এনে পুষছি ৩ মাস হলো। পাখি দুটিকে মুক্ত করে দেবো ঈদের দিন। এটাই আনন্দের খবর।

পাখি দুটি আনার পর আমি ওদের গোসল করাই, কাউন, চীনা আর পানি খেতে দিই। ওরা কুট কুট করে খায়। আমি মাঝেমধ্যে ওদের খাঁচা থেকে বের করে খুব আদর করি। কিন্তু লক্ষ্য করেছি, আমি ওদের যতই আদর-যত্ন করি না কেন ওরা সব সময় খাঁচা ভেঙে উড়াল দিয়ে চলে যেতে চায়।

একদিন স্বপ্নে দেখি- পাখি দুটি আমাকে বলছে, সুমাইয়া তুমি আমাদের কত আদর যত্নই না করো। তার পরেও আমাদের মনে সুখ নেই। সারা দিন আমরা খোলা আকাশে যেখানে ইচ্ছে ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু তোমরা আমাদের ধরে এনে ছোট্ট একটা খাঁচায় বন্দি করে রেখেছ। আমাদের সকল আনন্দ আর সুখ তোমরা শেষ করে দিয়েছ। তুমিই বলো এমন একটু জাগায় কি থাকা যায়? তুমি কি পারবে একটা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে? না, পারবে না। জানো, তোমাদের যেমন মা বাবা, ভাই বোন আত্মীয়স্বজন আছে তেমনি আমাদেরও আছে। আমাদেরও তেমন আছে। আমরা জানি না তারা এখন কোথায় কেমন আছে। তুমি যতই আদর করো না কেন, আমাদের একটুও ভালো লাগে না। আমাদের এভাবে ধরে বন্দি করে রেখে কী সুখ পাও তোমরা? তোমরা না সৃষ্টির সেরা জীব। তোমরা কি এভাবে আমাদের সুখ শান্তি নষ্ট করে দিতে পারো? তোমাদের সুখের জন্য আমাদের জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। তোমরা যদি আমাদের কষ্টের কথা বুঝতে তাহলে এভাবে কখনো বন্দি করে রাখতে পারতে না।

হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘামে ভিজে গেছে আমার শরীর। আমি দৌড়ে গিয়ে পাখি দুটিকে এনে দেখতে লাগলাম। এই গভীর রাতে ওরা তো ঘুমায়নি, ছটফট করছে। ইশ কত কষ্ট ওদের। আমি খাঁচা থেকে একটা একটা পাখি বের করে আদর করে আবার রেখে দিলাম খাঁচায়।

পরের দিন আমার দুই বান্ধবীর কাছে আমার স্বপ্নের কথাগুলো খুলে বললাম। ওরাও আমার দেখাদেখি পাখি পুষছে। আমি আরও বললাম, আয় আমরা পাখিগুলো ছেড়ে দিই। ওরা হতাশ হয়ে হয়ে বলল, ‘পাখি ছেড়ে দেব!’ আমি বললাম, আচ্ছা এতদিন যে পাখিগুলো পাললাম কী লাভ হলো আমাদের? খালি খালি কষ্ট দেওয়া। ওরা রাজি হয়ে গেল। আমার মাথায় সুন্দর একটা বুদ্ধি এলো। এই রোজার ঈদের দিন আমরা একটা অনুষ্ঠান করে পাখিগুলো মুক্ত করে দিব।

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাসার ছাদটা নানা রঙে সাজাবো। সেখানে বাড়ির সকল শিশু ও বড়দের দাওয়াত করবো।

আমার বান্ধবীরা ও বাসার সবাই আসবে ছাদে। সকলের হাততালিতে আমরা তিন বান্ধবী তিন জোড়া পাখি মুক্ত করে দেবো। পাখিগুলো মুক্তি পেয়ে চলে যাবে ওদের আপনজনদের কাছে। তখন ওরাও মুক্তি পাওয়ার আনন্দ-উৎসব করবে। আমরা তিন বান্ধবী এখন থেকেই পাখিকে মুক্তি দেওয়ার আনন্দে ছটফট করছি। কারণ মুক্তি দেওয়া আর মুক্তি পাওয়ার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছুই হতে পারে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর