শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাহসী পুনমের গল্প

তানহা জাদিদা খান

সাহসী পুনমের গল্প

একটি ছোট্ট শহরে পুনম নামে এক ছেলেকে নিয়ে আমাদের গল্প। পুনমের বাবা মি. রহমান একজন প্রভাবশালী এবং ধনী ব্যবসায়ী। পুনম ছিল তার বাবার সবচেয়ে আদরের সন্তান। পুনম খুবই মিষ্টি আর মেধাবী ছেলে। তার বাবা তাকে সব সময় বলতেন, ‘সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যায়।’

একদিন, পুনম স্কুল থেকে ফেরার পথে একটি অপরিচিত লোক তার পথরোধ করল। লোকটি সন্ত্রাসী ছিল এবং পুনমকে জোরপূর্বক তার গাড়িতে তুলে নিল। লোকটির চোখে খারাপ উদ্দেশ্য ছিল। পুনম ভয় পেয়ে গেলেও, তার বাবার কথাগুলো মনে করল-‘সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যায়।’

সন্ত্রাসী পুনমকে একটি অজানা জায়গায় নিয়ে গেল এবং একটি বদ্ধঘরে বন্দি করে রাখল। পুনম বুঝতে পারল যে, তাকে মুক্ত করতে হলে খুব সাবধানে কাজ করতে হবে। প্রথমেই সে তার ভয়কে জয় করার সিদ্ধান্ত নিল। পুনম সন্ত্রাসীর কাছে গিয়ে বলল, ‘আপনি কি ক্ষুধার্ত? আমি আপনাকে কিছু খেতে দিতে পারি।’

সন্ত্রাসী প্রথমে অবাক হলো, কিন্তু পুনমের মিষ্টি স্বভাব দেখে সে কিছুটা নরম হয়ে গেল। সে বলল, ‘তুমি এত শান্ত কেন? তুমি কি আমাকে ভয় পাও না?’

পুনম হেসে উত্তর দিল, ‘আমার বাবা বলতেন, যারা সাহসী, তারা কখনো ভয় পায় না। আর আমি জানি, আপনারও ভালো মন আছে। আপনি আমাকে কষ্ট দিতে চান না।’

সন্ত্রাসী কিছুটা ভাবল এবং বলল, ‘তুমি খুব বুদ্ধিমান ছেলে। কিন্তু আমি তোমাকে এখান থেকে মুক্তি দিতে পারি না। তোমার বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ চাই।’

পুনম কৌশলে উত্তর দিল, ‘আপনি যদি আমাকে মুক্তি দেন, আমি নিশ্চিত আমার বাবা আপনাকে ধন্যবাদ দেবেন এবং আপনি একটি ভালো কাজ করবেন। এতে আপনার জীবন বদলে যেতে পারে।’

সন্ত্রাসী পুনমের কথা শুনে কিছুটা বিব্রত হলো। সে কখনো এমন ব্যবহার আশা করেনি। তার মনে কিছুটা পরিবর্তন আসতে শুরু করল। পুনম আবার বলল, ‘আপনি জানেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভালো কিছু থাকে। আমি বিশ্বাস করি, আপনি ভালো কাজ করতে পারেন।’

অবশেষে, সন্ত্রাসী পুনমের মিষ্টি কথা এবং সাহস দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। সে ভাবল, ‘এত ছোট একটি ছেলে যদি এতটা সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা দেখাতে পারে, তাহলে আমি কেন খারাপ পথে থাকব?’

সে পুনমকে বলল, ‘তুমি ঠিক বলেছ। আমি খারাপ কাজ করছি। আমি তোমাকে মুক্তি দেব। কিন্তু আমি কীভাবে ভালো পথে ফিরতে পারি?’

পুনম হাসিমুখে বলল, ‘আপনি চাইলে আমার বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। আপনি নতুনভাবে জীবন শুরু করতে পারেন।’

সন্ত্রাসী পুনমের কথা শুনে আরও অবাক হলো এবং পুনমকে মুক্ত করে দিল। সে পুনমকে তার বাবার কাছে নিয়ে গেল এবং সব কথা খুলে বলল। মি. রহমান প্রথমে খুব রেগে গিয়েছিলেন, কিন্তু পুনমের অনুরোধে সন্ত্রাসীকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি সন্ত্রাসীকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন যাতে সে সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

পুনমের এই সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার গল্প সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ল। সবাই পুনমকে সাহসী বলেই ডাকতে লাগল। পুনম প্রমাণ করল, সঠিক সময়ে সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এই গল্প থেকে শিশুরা শিখতে পারবে, ভয়কে জয় করে এবং ভালো ব্যবহার দিয়ে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিও সামলানো যায়। পুনমের মতো সাহসী ও বুদ্ধিমান হওয়া সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর