শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

পিঁপড়েদের রাজা

এম এস ফরিদ

পিঁপড়েদের রাজা

দিনটি শুক্রবার। স্কুল বন্ধ। মিতু আজ সারা দিন ঘরে তার পুরাতন খেলনাগুলো নিয়ে খেলছে। এসব খেলনার মধ্যে রয়েছে কাঠের ঘোড়া, টিনের বাক্স ও কতগুলো লুডু খেলার গুটি আরও কত কী! স্কুল বন্ধ থাকলেই মিতু এগুলো নিয়ে খেলে। মিতু কখনো কখনো কল্পনাতে ঘোড়া দৌড়াতে থাকে। আর টিগডগ টিগডগ আওয়াজ করে। মনে হয় যেন কোনো রাজ্যের রাজকুমারী ঘোড়ায় চড়ে শিকারে যাচ্ছে। আবার কখনো মাটিতে লুডুর ছক এঁকে গুটিগুলো চালতে থাকে। এ ছাড়া নারকেলের মালা, কাপড়ের টুকরো নিয়েও খেলা চলে। রাতে মিতুর ছোট মামা ফোন দিয়ে জানায় যে, শুক্রবার মিতুদের বাড়ি আসছে। মিতু খবরটা শুনে বেশ আনন্দ পেয়েছে। অনেকদিন পর মামা আসবে। অনেক গল্প হবে মামার সঙ্গে। খেলার মাঝে মাঝে মিতু মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মামা কখন আসবে? মা মিতুকে বলল, অপেক্ষা করো মিতু, আসবে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো- মিতুর মামা এলো বাড়িতে। মামাকে দেখে মিতু অনেক খুশি। দৌড়ে গিয়ে উঠল মামার কোলে। ঢাকা থেকে মিতুর জন্য পছন্দের খাবার আনলেন মামা। চকলেট ও বিস্কুট খেতে ভালোবাসে মিতু। মিতু বেশ আনন্দ পেল। মামার হাত থেকে বিস্কুট হাতে নিয়ে উঠোনে চলে গেল মিতু। আনন্দে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছে মিতু। খেলার কথা একেবারেই ভুলে গেছে। রাত হয়ে এলো মিতু পড়ার টেবিলে বসেছে। এমন সময় মামা তার টেবিলে এসে বসলেন। মামা মিতুকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী করছো মিতু? প্রতিউত্তরে মিতু বলে, বাড়ির কাজ করছি মামা। মামা বললেন, ঠিক আছে করো। আজ পড়ার শেষে তোমাকে নতুন গল্প শোনাবো। শুনবে তো? মিতু মাথা নেড়ে জানালো, শুনবো। তোমার গল্প শুনতে বেশ ভালো লাগে। রাতের খাবার শেষে মিতু গেল মামার কাছে। মামা আমাকে গল্প শোনাও। মামা অনেক গল্প শোনালেন। অনেক গল্পের মধ্যে পিঁপড়েদের রাজার গল্পটি মিতুর বেশ ভালো লেগেছে। গল্পটি ছিল- বর্ষার আগেই পিঁপড়েরা তাদের খাবার সঞ্চয় করে। যাতে বাদল দিনে তাদের খাবারে কষ্ট না হয়। পিঁপড়ে রাজার হুকুম- প্রজাগণ, বর্ষার আগেই তোমাদের সবার খাদ্য সঞ্চয় করো। আর বৃষ্টি বাদল দিনে কেউ গর্ত থেকে বের হবে না। বের হলে বৃষ্টির পানিতে ভেসে যেতে পারো। অন্য প্রাণীদের পদতলে চাপা পড়তে পারো। তাই সময়কে কাজে লাগাও। আর খাবার যোগাড়ে লেগে পড়ো। রাজার হুকুম অনুযায়ী সব পিঁপড়ের দল খাবার খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে এবং খাবার সংগ্রহ করে গর্তের ভিতরে রেখে দেয়। বৈরী আবহাওয়াতে সঞ্চয় করা খাবারগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে পিঁপড়েরা। মিতু গল্পের মাঝে মামাকে প্রশ্ন করে, মামা! পিঁপড়েদেরও রাজা আছে? মামা বলল, হ্যাঁ মিতু, আছে। মামা মিতুকে প্রত্যক্ষভাবে দেখিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দেয়। মামা বলেন, আগামীকাল সকালে তোমায় পিঁপড়ে রাজাকে দেখাবো। দেখবে, রাজা প্রজা পিঁপড়েদের কত সুন্দর পথ দেখায়। আর খাবার সংগ্রহে সাহায্য করে। মিতু বলল, ঠিক আছে মামা। এভাবে গল্প শুনতে শুনতে মিতু ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে মিতুর মা সবাইকে নাশতা দেয়। মিতুকে দেওয়া হয় মামার নিয়ে আসা বিস্কুট। মামা খেয়াল করে দেখে- মিতু মনোযোগ দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছে। এই সুযোগে মামা মিতুকে বললেন, এসো তোমাকে পিঁপড়েদের রাজাকে দেখাবো। মিতু মামার সঙ্গে উঠোনের এক কোণে একটি উঁচু টিলার মতো মাটির স্তূপ দেখলো। স্তূপে ছিল ছোট ছোট গর্ত। মামা মিতুর হাত থেকে বিস্কুট নিয়ে গুঁড়া করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেন গর্তের চারদিকে। অল্প কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, দুটি পিঁপড়ে এসে বিস্কুটের গুঁড়োগুলোকে ভালো করে শুঁকছে। পিঁপড়ে দুটি চলে গেল। কতক্ষণ পরে দেখা গেল আরও একদল পিঁপড়ে। এভাবে দলে দলে পিঁপড়ে আসতে শুরু করল বিস্কুটের গুঁড়া নিয়ে যেতে। মিতু একটা বিষয় খেয়াল করল, পিঁপড়েদের দলগুলোতে একটি বড় আকারের পিঁপড়ে এদিক সেদিক ঘুরছে। আর বড় পিঁপড়েটির সঙ্গে আরও একটু ছোট সাইজের পিঁপড়েরাও ঘুরতে লাগলো। মিতু মামাকে প্রশ্ন করল, মামা- এই বড় পিঁপড়েটি কি পিঁপড়েদের রাজা? মামা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। এই রাজার কথাই তোমাকে গতকাল রাতে বলা হয়েছে। দ্যাখো মিতু, রাজা ঘুরে ঘুরে সবার তদারকি করছে। দেখছে, সবাই ঠিকমতো খাবার সংগ্রহ করছে কি না। আর প্রথম পিঁপড়ে দুটি হলো রাজার পেয়াদা। তারা গিয়েই রাজাকে খাবারের খোঁজ দেয়। পরে রাজা তার সৈন্য নিয়ে পরিদর্শন করতে আসে। খবর পাঠায় সবাই যেন খাবার সংগ্রহে নেমে পড়ে আর দ্যাখো, কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে সারি সারি হয়ে খাবার সংগ্রহ করছে। মিতু এসব দেখে তো পুরোপুরিই আনন্দ পেতে থাকল। রাতের গল্প আর সকালের সরাসরি পিঁপড়েদের রাজাকে দেখে সে অনেক খুশি। মামার গল্প যেন তার কাছে গল্প নয়, যেন এক বাস্তবচিত্র। আর এ জন্যই মিতু তার ছোট মামার কাছে গল্প শুনতে বেশ ভালোবাসে। পরের দিন মামা ঢাকায় চলে যায়। মিতু মামাকে বিদায় দেয়। ফের নিমন্ত্রণ করে- আবার ছুটি পেলে মিতুদের বাড়ি আসার। মামাও আসবে বলে বিদায় নেয়। মিতু কতক্ষণ পথের দিকে চেয়ে থেকে মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে আসে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর