একানব্বইয়ের নির্বাচনের পর দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তিত হলেও তার চর্চা নেই বললেই চলে। এর ফলে সংসদীয় রাজনীতির সুফল যেমন জনগণের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না, তেমনই বিকশিত হচ্ছে না রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল হলো একই মুদ্রার দুই পিঠ। এর একটি ছাড়া অন্যটি কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু গত ২২ বছরে সংসদ চলছে কার্যত বিরোধী দল ছাড়াই। সংসদের সিংহভাগ অধিবেশনে বিরোধী দল অনুপস্থিত থাকছে। ফলে সংসদ কোনোভাবেই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে না। সহযোগী দৈনিকে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্রে পার্লামেন্ট নেতৃত্ব বিকাশের প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রবিন্দু হলেও এ ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। একদিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেতৃত্বের কাঠামোগত চর্চার অভাব, অন্যদিকে বিরোধী দলের অব্যাহত বয়কটে প্রাণহীন সংসদে নেতৃত্ব বিকাশের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। বোধগম্য কারণেই নেতা তৈরির 'কারখানা' জাতীয় সংসদ দক্ষ নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। নির্বাচিত অনেক নেতা সংসদে এসে আইন প্রণয়নে নিজেদের দক্ষ ও অভিজ্ঞ করতে নয়, ব্যস্ত হয়ে পড়েন নানা সুবিধা অর্জনে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশের রাজপথমুখী রাজনীতিকে কোনোভাবেই সংসদমুখী করা যাচ্ছে না। আইন প্রণয়ন, বাজেট ঘোষণাসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায়। নেতৃত্বকে শাণিত করে সংসদীয় বিতর্ক। কিন্তু পারস্পরিক বিরোধী রাজনীতির কারণে সংসদে এসব চর্চা একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে নেতৃত্ব তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় সংসদ। ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও সংসদ সদস্যদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সিনিয়রদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ বিভিন্ন সেশনের আয়োজন করা হয়। যা আমাদের সংসদে অনুপস্থিত। এ দেশের মানুষ সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান আমলে প্রায় একযুগ ধরে আন্দোলন করেছে। স্বাধীনতার পরও এ জন্য চলেছে আন্দোলন-সংগ্রাম। এমনকি বুকের রক্তও বিসর্জন দিয়েছে। তারপরও সংসদীয় রাজনীতিকে নিজস্ব পথে চলার সুযোগ না দেওয়া এবং নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতা সৃষ্টির প্রক্রিয়া রুদ্ধ রাখা দুর্ভাগ্যজনক। গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই বৈরী অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হবে। সংসদীয় গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে পালন করতে হবে সরকার ও বিরোধী দলকে অঙ্গীকারাবদ্ধ ভূমিকা।