শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩ ০০:০০ টা

দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি

রাজনীতি ও সন্ত্রাস দুটি পরস্পরবিরোধী বিষয়। রাজনীতির সঙ্গে দেশ পরিচালনার সম্পর্ক জড়িত। দেশের মানুষের কিসে ভালো হবে, কোন পথে চললে দেশের উন্নতি হবে, সেটিই হওয়া উচিত রাজনীতির বিবেচ্য বিষয়। অন্যদিকে সন্ত্রাস হলো অপরাধ জগতের বিষয়। অন্ধকার জগতের অধিবাসী যারা তারা বেছে নেয় এ পথ। রাজনীতি ও সন্ত্রাসের সহাবস্থান অকল্পনীয় হলেও আমাদের এই 'সব সম্ভবের দেশে' সন্ত্রাসীরাই ক্রমান্বয়ে রাজনীতির নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠনগুলোতে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য রাজনীতিকে কোণঠাসা করে ফেলছে। যে দেশের রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মতো নেতাদের ধারণ করেছে সে দেশের রাজনীতি এখন অধঃপতনের শিকার। পিলে কাঁপানো সন্ত্রাসীরা দখল করে আছে রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদ। ২০ খুনের ঘটনায় যার সম্পৃক্ততা সেই এইচ এম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ছিলেন মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে পরিচিত যিনি, তিনি এখন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত। ধরা পড়ার ভয়ে পলাতক রয়েছেন এই কথিত রাজনৈতিক নেতা। বিরোধী দলের দিকে দৃষ্টি দিলেও একই ধরনের বিচ্যুতি চোখে পড়বে। সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক দলে ঠাঁই পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অসহায় অবস্থার শিকার হতে হচ্ছে। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসার পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাদের পাকড়াও করার উদ্যোগও নেওয়া হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তালিকা তৈরি করলেও তা চার বছর ধরে সংশোধনের নামে ফাইলবন্দী। এ তালিকার সন্ত্রাসীদের অনেকেই এখন রাজনীতিতে সক্রিয়। পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকাটি সংশোধন করে প্রকাশ না করায় তাদের গ্রেফতার, নজরদারি বা ধরিয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ এ পর্যন্ত নেওয়া যায়নি। ফলে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক সাইনবোর্ডের নিচে আশ্রয় নিয়ে পিঠ বাঁচাতে পারছে। সাধারণ মানুষ পেশিশক্তির প্রতিভূদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। সন্ত্রাসীরা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য সম্পদ নয়। বরং এ বর্জ্যের অবস্থান রাজনৈতিক দলকে দুর্গন্ধময় করে তোলে। জনগণকে সংশ্লিষ্ট দল থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করে। তারপরও কোনো সচেতনতা নেই। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেন না। দুর্ভাগ্য একেই বলে।

সর্বশেষ খবর