সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাড়ছে দেশের আয়তন

বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ। গত ৪৪ বছরে সাগরপ্রান্তের জমি উদ্ধারের ফলে দেশের আয়তন বেড়েছে প্রায় ১২শ' বর্গমাইল। চলতি বছর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে দুই হাজার ২০০ বর্গমাইল পরিমাণ জমি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন নদীর মোহনায় যে চর পড়েছে তা সুপরিকল্পিতভাবে সুরক্ষা ও উদ্ধার করা হলে অন্তত ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। যেসব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে চর জেগে উঠছে সে এলাকায় ক্রসবাঁধ বেঁধে ভূমি উদ্ধার এবং বনায়নের মাধ্যমে তা স্থায়ীকরণ সম্ভব হবে। নেদারল্যান্ড এ পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ জমি সাগরপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশকেও তারা এ ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছে। বাংলাদেশ দুনিয়ার অন্যতম ঘনবসতির দেশ। গত চার দশকে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, শিল্প-কলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে কৃষিজমি ব্যবহৃত হওয়ায় তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশে এখন চাষযোগ্য জমির অপ্রতুলতা যেমন দেখা দিচ্ছে তেমন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। সাগর প্রান্তে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে তা এ সংকট থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। সাগর প্রান্তে নিঝুম দ্বীপের আশপাশের জমি উদ্ধার করে বনায়ন এবং পর্যটন জোন গড়ে তোলা হলে পর্যটন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া অবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে বনায়ন করা হলে ভূমিক্ষয় যেমন রোধ হবে, তেমন উপকূলবর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডোর আঘাত থেকে রক্ষা পাবে। স্বাধীনতার পর নিঝুম দ্বীপে বনায়ন এবং মাত্র কয়েকটি হরিণ ছেড়ে দেওয়া হয়। এ এলাকায় হরিণের সংখ্যা এখন প্রায় ২৫ হাজার এবং তা বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবন সুন্দরবনের মোট হরিণের চেয়ে বেশি। এ এলাকা থেকে বছরে অন্তত ২০ হাজার হরিণ রপ্তানি করা সম্ভব এবং তা করা গেলে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থাও বিরাজ করবে। আমরা আশা করব, সরকার সাগরপ্রান্তে জমি উদ্ধারকে তাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি হিসেবে নেবে এবং বৈজ্ঞানিক উপায়েও জমি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। জনসংখ্যার তুলনায় ভূমির স্বল্পতা জাতির জন্য যেহেতু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সেহেতু এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিকতার প্রতিফলন ঘটবে- আমরা তেমনটিই দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর