বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

দখল সংস্কৃতি

কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না

'জোর যার মুল্লুক তার' বাংলা ভাষার একটি প্রবচন। এটি আমাদের সমাজের অনেকের কাছে অনুসরণীয় নীতিও বটে। বিশেষ করে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের পরিচিতিকে সম্বল করে দুর্বৃত্তরা উঠেপড়ে লাগে দখলবাজিতে। হালের এ আমলেও চলছে বেপরোয়া দখলবাজি। সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে অপকর্মের বরপুত্ররা এহেন কর্ম নেই যা থেকে বিরত থাকছে। বিচারপতির বাড়ি, সরকারি সম্পত্তি, টেন্ডার থেকে শুরু করে পেশাজীবীদের ক্লাব-সংগঠনও দখলবাজির শিকার হচ্ছে। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে অশুভ সিন্ডিকেট। তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিচ্ছে সবকিছু। খাল-বিল, নদী-নালা, ফুটপাথ এমনকি ওভারব্রিজের উপর পথচারী চলাচলের স্থানটুকু খাবলে ধরছে। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে মিল-কারখানা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, জমি-জিরাত, বাড়িঘর দখলের কসরত চালানো হচ্ছে। র্যাব-পুলিশ আর প্রশাসনের দফতরে দফতরে অভিযোগের পাহাড় জমে উঠলেও প্রতিকার নেই। ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারে দাপিয়ে বেড়ানো দখলবাজদের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অসহায়। সরকারি দলের নেতা-কর্মী পরিচয়ে জমিজমা দখল নতুন কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হল, ভোটকেন্দ্র, টেন্ডারবাক্স, প্রেসক্লাব, বাস-লঞ্চ টার্মিনাল, সরকারি খাসজমি, লেক, রেলের জমি, এমনকি পাহাড় পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের পকেটে ঢুকে যাচ্ছে অনায়াসে। গেল এক দশকে দখলে গেছে রাজধানীর অন্তত ১২টি মাঠ ও শিশুপার্ক। রাজধানীর শিশুরা এখন খেলার জায়গা খুঁজে নিচ্ছে কম্পিউটার ও মোবাইলে। ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাথের মধ্যে ১০৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটারই এখন অবৈধ দখলে। অপদখলের সংস্কৃতি প্রতিটি সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের একাংশকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। সরকারি দলের ভাবমূর্তির জন্য তারা বিড়ম্বনা ডেকে আনলেও কেউ এসব অপদেবতাকে সামাল দেওয়ার তাগিদ অনুভব করছেন বলে মনে হয় না। দখলবাজিদের দৌরাত্দ্য এতটাই আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে যে, দেশ ও সমাজের কোনো কিছুই তাদের ঘৃণ্য থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশের মানুষ ক্রমান্বয়ে দখলবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। আইনের শাসন কায়েম করতে হলে দখল সংস্কৃতির অবসানে উদ্যোগী হতে হবে। এখনই।

 

 

সর্বশেষ খবর