শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

কথন অকথনের কথনিকা

হানিফ সংকেত

কথন অকথনের কথনিকা

কথায় আছে, 'ধনুকের তীর আর মুখের কথা একবার বেরিয়ে গেলে তা আর ফেরানো যায় না'। কথাটি পুরনো হলেও আমার বেশ পছন্দের, কারণ কথাটি শতভাগ সত্য। তেমনি সাধক সত্যানন্দের আর একটি কথা রয়েছে, 'অনেক কথার অনেক দোষ-ভেবে চিন্তে কথা কোস্'। উপরের এবং নিচের কথাটির মধ্যে একটি চমৎকার যোগসূত্র রয়েছে। যেহেতু মুখের কথা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফেরানো যায় না, তাই প্রতিটি কথাই ভেবেচিন্তে বলা উচিত, নইলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে এবং ঘটছেও। সেসব ঘটনায় পরে আসছি। তার আগে কথা নিয়ে কিছু কথা বলি। একটি উপদেশ বাক্য রয়েছে, 'কথা কম-কাজ বেশি' তার পরও আমরা কাজের চেয়ে কথা বেশি বলি। এই কথা কখনো অযথা কথা, কখনো যথা কথা আবার কখনো কথার কথা। আবার এসব অযথা কথা প্রথাসিদ্ধ না হলেই বাড়ে হুঙ্কার, কথা হয়ে যায় 'চিৎকার'। সে হুঙ্কারের প্রতিবাদে অন্যের দেহে কাঁপন ধরে, সে কাঁপনের মাধ্যমে যা জ্ঞাপন করা হয়, তার চিত্র চিত্রায়ণ সঙ্গত নয়। তার পরও সেসব দৃশ্য আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি।

সারা দিনের কর্মক্লান্তির পর মানুষ যখন ঘুমাতে যাওয়ার আয়োজনে ব্যস্ত কিংবা কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলো একসঙ্গে জেগে ওঠে- নানান কথা নিয়ে। দেশের হেন সমস্যা নেই যা নিয়ে আলোচনা হয় না। অবশ্যই এটি একটি ভালো দিক। গণতান্ত্রিক সমাজে এটাই হওয়া উচিত। অবশ্য যদি তা প্রচারযোগ্য এবং শোভনীয় পর্যায়ে থাকে। আগে যখন শুধু বিটিভি ছিল তখন মধ্যরাতের এ সময়টায় টিভি দর্শকরা বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমাদের জাতীয় পতাকার সঙ্গে আমাদের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা...' গানটি শুনতে অভ্যস্ত। এর মানে হচ্ছে, 'সম্প্রচার শেষ- আপনারা ঘুমান, আমরাও বাড়ি যাই।' কিন্তু স্যাটেলাইটের যুগে ওই সময়টায় বিটিভি এখনো তাদের পুরনো পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানলেও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোয় এ সময় শুরু হয় একই আঙ্গিকের নানান নামের 'কথার' অনুষ্ঠান- 'টকশো'। টকশো টক-ঝাল-মিষ্টি হলে মন্দ নয়। কিন্তু শুধুই যদি টক হয় কিংবা টক করতে গিয়ে টক্কর হয় বা শুধুই টক অর্থাৎ বকবক করাই সার হয়, তবে তার ভার সওয়া দর্শকদের জন্য একটু কঠিন বইকি। তা ছাড়া কথা যদি অযথা হয় এবং সত্যকে আড়াল করে যার যার নিজস্ব দলীয় দলিলে বলা হয়, তবে দর্শকরা ভ্রান্ত ধারণা পান, হন বিভ্রান্ত। হয়তো এদের কারও কারও মুখের প্রখর মুখরতায় মুগ্ধ হন অনেকেই, আবার ক্ষিপ্তও হন অনেকে।

রাজনৈতিক বিভিন্ন মতবাদ এবং সে মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ইতিহাস নিয়ে প্রায়ই টানাহেঁচড়া লক্ষ্য করা যায় এসব টকশোতে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা যে যা-ই বলুক দর্শকরা সবই বোঝেন। এই সময়ে সেই সময়কে নিয়ে কেউ যখন কোনো তথ্য বা বক্তব্য প্রদান করেন তখন সেই সময়ের দর্শকরা সবই বুঝতে পারেন। বুঝতে পারেন কোনটা সত্য, কোনটা অসত্য। কারণ তারা সবই দেখেছেন, সবই জানেন। কোনো তথ্য বিকৃতি থাকলে তারা নীরবে হাসেন, যে হাসি টিভি টকশোর বক্তারা দেখতে পান না। তবে টকশোর এসব আলোচনায় বিশেষভাবে বিভ্রান্ত হয় এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা, যারা ইতিহাসের অনেক কিছুই দেখেনি। শুনে শুনে যেটুকু জেনেছে সেটাই সম্বল। সমস্যাটা সেখানেই। একই টকশোতে একই বিষয় নিয়ে যখন একেকজন একেক রকম বিশ্লেষণ করতে থাকেন, তখন স্বভাবতই তারা বিভ্রান্ত হয়। কারণ যারা বলছেন তারা বিজ্ঞ এবং কেউ কেউ বিশেষজ্ঞ, জ্ঞানীগুণী জন। তাদের কথা অবিশ্বাস করাও কঠিন। অনেক সময় দেখা যায় টকশোর আলোচনায় দুই-তিন মতাদর্শের আইনজীবীরা তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে কথা বলেন। সব পক্ষই তাদের যুক্তির পক্ষে বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আবার অনেকেই পবিত্র সংবিধানকেও টেনে নিয়ে আসেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের প্রায় ৯৯ ভাগ লোকই আইনের এসব ধারার সঙ্গে পরিচিত নন। কোন ধারায় কী বলা হয়েছে, তা অনেকেরই জানা নেই। সুতরাং যে যা বলছে তা-ই তরুণ প্রজন্ম শুনছে এবং আইনের একই ধারার নানান বিশ্লেষণ শুনে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাদেরও জিজ্ঞাসা- আসলে কোন ধারার কোন ব্যাখ্যা ঠিক? কথাগুলো আমি লেখার জন্যই লিখছি না, সারা দেশ থেকে আমাদের কাছে এই প্রজন্মের অনেক তরুণ দর্শক এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে। জানতে চায়। তবে আমরাও এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারি না। কারণ আইনের অনেক ধারার সঙ্গে আমরাও পরিচিত নই। ইদানীং আবার টকশোগুলোয় কিছু অদ্ভুত আলোচনা শুনতে পাই। যে বক্তা যে বিষয়ে অভিজ্ঞ নন কিংবা যে বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়, তিনিও সেসব বিষয়ের বিশ্লেষণ করতে থাকেন। কখনো খুন, কখনো গুম, মামলা-মোকদ্দমা, আইন-কানুন কোনো কিছুই এদের আলোচনা থেকে বাদ যায় না। এমনকি কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে, কেন দুর্ঘটনা ঘটল? কীভাবে ঘটল? কারা ঘটাল? দুর্ঘটনার পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না- সব বিষয় নিয়েই তারা কথা বলেন। এমনকি মৃতের সংখ্যা নিয়েও অনেকে বাহাসে লিপ্ত হন। অথচ এদের কেউই ঘটনাস্থলে যাননি। স্বচক্ষে দেখেনওনি। সবার মতোই টেলিভিশন, রেডিও বা পত্রিকা এদের তথ্যসূত্র। আবার কেউ খুন হলে বা গুম হলে কীভাবে খুন হলো, কারা খুন করতে পারে, কেন খুন করেছে কিংবা কেউ গুম হলে সে আদৌ গুম হয়েছে কি না, গুম হলে কে গুম করল, এখনো জীবিত আছে কি না- এসব নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে মধ্যরাতের পর জমে ওঠে উত্তপ্ত আলোচনা। এদের আলোচনায় মনে হয় পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগ সঠিক তথ্য দিতে পারছে না অর্থাৎ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ব্যর্থ। ওনারা হলে পারতেন। অথচ দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এসব আলোচনায় বক্তারা প্রতিটি কথাই বলেন যার যার দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। কোনো দলের কেউ গুম হলে অন্য দল বলে গুম হয়নি, ইচ্ছা করে লুকিয়ে আছে কিংবা রেখেছে। আবার এক দলের কেউ খুন হলে অন্য দলের লোকেরা বলে ওরা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে খুন হয়েছে। এসব মন্তব্যের কারণে অপরাধী ভাবতে থাকে তার পক্ষেও লোকজন আছে। পুলিশও এসব আলোচনায় বুঝে ফেলে কার কীসে স্বার্থ। তখন তারাও অবস্থা বুঝে তাদের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে।

অনেকের মতে, টকশোগুলোয় এ ধরনের দলীয় পর্যালোচনা বিভিন্ন মামলার তদন্তকাজকে মারাত্দকভাবে বিঘি্নত করে। এদের আলাপ-আলোচনায় মনে হয় পুলিশ প্রশাসন কিছুই পারছে না। অথচ এই সুশীলজন কী সুন্দর সব বলে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এরা কীভাবে বলছে? জ্যোতিষ নাকি? নাকি এদের কোনো গায়েবি শক্তি আছে। নাকি দল বলেছে সুতরাং বলতে হবে। আমাদের এখানে এটি একটি বেশ লক্ষণীয় বিষয়- যে কোনো ইস্যুতে কোনো দল যদি দিনকে রাত বলে, ব্যস, সেই দলের বুদ্ধিজীবী, সুশীল, আইনজীবী, লেখক, সাংবাদিক সবাই তখন ওই রাতকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। আর অন্য দল মরিয়া হয়ে ওঠে দিনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই পাল্টাপাল্টি তর্কযুদ্ধে যে বা যারা ভালো করবে, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। ক্ষমতায় থাকলে বিশেষ পদ আর ক্ষমতায় না থাকলে দলে বিশেষ পদ এবং ভবিষ্যতে দল ক্ষমতায় এলে ভালো পদ পাওয়ার নিশ্চয়তা। এ পদ্ধতিকে এক ধরনের মিডিয়া চামচামি বলা হয়। আবার তর্ক করতে করতে এরা মাঝে মাঝে এমন সব অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ প্রসঙ্গে আমাদের অনুষ্ঠানকে ঘিরে একবার এক আলোচকের সমালোচনার কথা মনে পড়ল। আমরা সব সময় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কিছু নাট্যাংশ করে থাকি। টকশোগুলোয় যেহেতু সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়, তাই প্রায়ই আমাদের অনুষ্ঠানে টকশোর প্রসঙ্গটি স্থান পায় এবং সেখানে আমরা কিছু কিছু টকশোর বিষয়, বক্তা, সঞ্চালকের অসঙ্গতি তুলে ধরতে চেষ্টা করি। যেমন কিছু কিছু বক্তা কথা বলতে গিয়ে এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়েন যে তাদের কথাবার্তা এবং দেহভঙ্গি অশোভন হয়ে পড়ে, যা মিডিয়ায় প্রচারযোগ্য নয়। উত্তেজনার বশে ভুলে যান এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মিসভা নয় যে নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষের সামনে কথা হচ্ছে। এদের অনেকেই আবার টকশোর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, সংসদ হচ্ছে বড় পার্লামেন্ট এবং এসব টকশো মিনি পার্লামেন্ট। এ মিনি পার্লামেন্টে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়। কিন্তু এ প্রাণ খুলে কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে কেউ যখন হাত খুলে কথা বলতে চেষ্টা করেন, তখনই খারাপ লাগে। কারণ বিষয়টি দৃষ্টিকটু এবং লজ্জাজনক। এ বিষয়গুলো তুলে ধরতেই আমরা স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলাভিশনের পঞ্চম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে টকশো নিয়ে একটি পর্ব করেছিলাম। টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের তিনজন জনপ্রিয় শিল্পী এতে অভিনয় করেছিলেন। গণতন্ত্র রক্ষা করা আর না করা নিয়ে এ প্রতীকী টকশোয় আলোচকদের কিছু কিছু টিভি টকশোর আদলে উত্তেজিত ভঙ্গিতে তর্ক করতে বলেছিলাম। অনুষ্ঠানটি ছিল লাইভ। পর্বটি শুরু হলে তাদের আলাপ-আলোচনা দেখে উপস্থিত দর্শকরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। আলোচনার শেষ পর্যায়ে আমার নির্দেশনার বাইরে দুই আলোচক একে অন্যকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে মারতে উদ্যত হন। তবে মারেননি। তার পরও তাদের এ মারমুখী হওয়ার বিষয়টি আমার কাছে দৃষ্টিশোভন মনে হয়নি। তবে লাইভ অনুষ্ঠান বলে সম্পাদনাও করতে পারিনি। প্রচারের পর সবাই পর্বটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেও কেউ কেউ বলেছেন অভিনেতারা একটু বেশি বেশি করে ফেলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, বাড়াবাড়ি হয়েছে। যাই হোক, অনুষ্ঠান করতে গেলে খারাপ-ভালো দুই রকম মন্তব্যই শুনতে হবে। তাই শুনলাম। তবে মজার ব্যাপার হলো, এর কিছু দিন পরই টিভির এক টকশোয় দেখলাম টকশোর দুই বক্তাই মারপিট করার জন্য উত্তেজিত ভঙ্গিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। কে কাকে দেখে নেবেন হুঙ্কার দিচ্ছেন। সঞ্চালক কাউকেই সামাল দিতে পারছেন না। সে এক অস্বস্তিকর দৃশ্য। আবার কিছু দিন আগে এক চ্যানেলে দেখলাম দুজন সম্মানিত সুশীল আঙ্গুল উঁচিয়ে একজন আর একজনকে শাঁসাচ্ছেন। একপর্যায়ে এক সুশীল অন্য সুশীলকে আঘাত করে বসলেন। অন্যজনও সঙ্গে সঙ্গে প্রতিঘাত করলেন। এই সুশীলদের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে সঞ্চালককে অত্যন্ত অসহায় মনে হচ্ছিল। অনেকক্ষণ ধরে তিনি তাদের থামাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ক্যামেরা তাদের কাছ থেকে সরে গেলেও শব্দ শোনা যাচ্ছিল- 'এক চড় দেব' ইত্যাদি ইত্যাদি। বিষয়টি দেখে বেশ খারাপ লাগল, তবে কিছুটা সান্ত্বনা পেলাম এই ভেবে যে, আমাদের টকশো নিয়ে কেউ কেউ বিভিন্ন ব্যঙ্গাত্দক উক্তি করলেও আমাদের আয়োজিত টকশোতে হাতাহাতি ছিল না।

বিষয়টি ওখানে থেমে গেলেও চলত কিন্তু দেশের দুজন বড় মাপের সুশীল ব্যক্তির হাতাহাতির ঘটনা ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল সারা বিশ্বে। বিদেশে লেখাপড়া করতে যাওয়া তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এ দৃশ্য দেখে হতবাক। আমাদের অনুরোধ করেছেন এসব বিষয় নিয়ে আমরা যেন 'ইত্যাদি'তে কিছু করি। লিখেছেন, সমাজের শিক্ষিত শ্রেণির মানুষ যদি এমন আচরণ করেন তাহলে আমরা কাদের কাছ থেকে শিখব? এসব অনুরোধ শুনে কী করব, কী করা উচিত বুঝতে পারি না। কারণ আগে আমাদের ব্যঙ্গাত্দক টকশোয় আলোচকদের উত্তেজনার চিত্র দেখালে, কেউ কেউ বলতেন- বেশি বেশি হয়ে গেছে। আর এখন যদি মারপিটের অনুকরণ দেখাই, তাতে কি কোনো নতুনত্ব আসবে? আবার এ আচরণকে বেশি বেশিও বলা যাবে না। কারণ এটা এখন স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিন আমরা এ অস্বাভাবিক ঘটনাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেব?

সঞ্চালকদের নিয়েও একই সমস্যা। কিছু কিছু চ্যানেলের সঞ্চালকের একপেশে আচরণ অর্থাৎ দুই পক্ষকে টকশোয় এনে এক পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। বিভিন্ন টকশোর সঞ্চালকদের এ ধরনের আচরণও ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ইউটিউবে দেখলাম দু-একজন বক্তা সঞ্চালকদের পক্ষপাতিত্বের কারণে লাইভ টকশো থেকে উঠে যেতে চাইছেন। কেউবা তাদের এ পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের প্রতিবাদ করছেন, কেউবা ধমকাচ্ছেন, কেউ তাদের সঞ্চালনায় ভবিষ্যতে ওইসব টকশোয় অংশগ্রহণ করবেন না বলেও ঘোষণা দিচ্ছেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, বাদ-প্রতিবাদ যাই হোক সবাই আপন আপন চরিত্র নিয়ে যথারীতি এখনো টকশোয় উপস্থিত আছেন।

আমাদের দেশে একটি কথা চালু আছে, তা হলো- গলাবাজি। এ প্রসঙ্গে 'ইত্যাদি' অনুষ্ঠানের নিয়মিত চরিত্র নানা-নাতির একটি গল্প মনে পড়ে গেল। নাতি তার নানাকে একবার চিড়িয়াখানার উটপাখি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, 'আচ্ছা নানা বল তো এ উটপাখির সঙ্গে আমাদের বিশেষ পার্থক্য কী?' নানা আমতা আমতা করছিল দেখে নাতি বলল, 'প্রধান পার্থক্য হইল গলা, ওদের গলা আমাদের চাইতে অনেক বড়, তার পরও মানুষের মতো গলাবাজি নাই।' আর গণ্ডারের খাঁচার সামনে গিয়ে নানা আগেভাগেই বলল, 'এইডা হইল গণ্ডার, চামড়া মোটা। ওই যে আমরা বলি না, গণ্ডারের চামড়া, কিছু কইলে গায়ে লাগে না।' নাতি তখন হেসে বলল, 'এটাও ঠিক না, কারণ আমাগো অনেকের চামড়া এই গণ্ডারের চামড়ার চাইতেও মোটা, গায়ে লাগে না।'

গলা দিয়ে বেশি বলা হলে, গলা জ্বলার ভয় তো থাকবেই। তাই গলার ওপর চাপ কমাতে কথারও মাপ থাকা দরকার। কথা কম কাজ বেশি- কাজ পেলেই সবাই খুশি কারণ কথায়ই আছে, 'খালি কলসি বাজে বেশি, ভরা কলসি বাজে না'। প্রচারের প্রাচুর্যতা না থাকলেও, যা সত্য তা নিভৃত নিরালায়ও সত্যই থাকে, মিথ্যা দিয়ে কখনোই সত্যকে ঢাকা যায় না। সুতরাং খালি কলসি বেশি না বাজানোই ভালো, তাতে ফাঁক এবং ফাঁকি ধরা পড়ার ঝুঁকি কম থাকে।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

 

সর্বশেষ খবর