আলাউদ্দিন খলজি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর তার শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে তিনি তুর্কি মালিকদের ঔদ্ধত্য ও বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যের শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সাম্রাজ্যে যাতে বিদ্রোহ সংঘটিত হতে না পারে, তিনি তার ব্যবস্থা করেন। আমির-ওমরাহ ও বিত্তবানদের মধ্যে প্রচলিত দুর্নীতির তিনি মূলোৎপাটন করেছিলেন। সুদৃঢ় ও কঠোর ব্যবস্থা দ্বারা তিনি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তার শাসনব্যবস্থা স্বৈরাচারী হলেও জনকল্যাণমূলক ছিল। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একটি সুবিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন। তার স্বৈরনীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে, সাম্রাজ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে এবং নিরাপত্তা বিধানে এ সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আলাউদ্দিন খলজি সৈন্যদের জায়গীর দান প্রথার বিলোপ সাধন করে নগদ বেতন দানের নীতি প্রবর্তন করেছিলেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস তার শাসনামলের বিরাট সাফল্য। তিনি রাজস্ব আদায়কারী খুত, মুকাদ্দাম ও চৌধুরীদের অত্যাচার থেকে প্রজাদের রক্ষা করেছিলেন। ধনিকশ্রেণির নির্মমতা থেকে প্রজাসাধারণকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার প্রসিদ্ধ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি ঘোষণা ও চালু করে অন্যায়ভাবে অর্থলাভের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রথার প্রবর্তন এবং সফল বাস্তবায়ন মধ্যযুগের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। ভূমি জরিপ ব্যবস্থা ভারতবর্ষে মুসলিম শাসক হিসেবে তিনিই সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন। রাষ্ট্রের কাজের জন্য অশ্বকে চিহ্নিত করার প্রথা প্রবর্তন করে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রচলিত দুর্নীতি দমন করেন।
শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন খলজি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। তিনি মনে করতেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি মানুষের বিবেককে আচ্ছন্ন করে। তাই তিনি ওলামা সম্প্রদায়কে তার শাসননীতি থেকে দূরে রেখেছিলেন। রাষ্ট্রের জন্য তিনি যা মঙ্গলজনক মনে করতেন, শরিয়ত ও ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থী হলেও তিনি তা সম্পাদন করতেন। ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাউদ্দিন খলজির শাসনামলের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি ন্যায়বিচারিক ছিলেন। অপরাধী ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের তিনি নির্মম শাস্তি দিতেন। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিবেচনার কোনো স্থান ছিল না। এ ব্যাপারে কোনো কিছুই তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে পারত না।